বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৪০ পিএম
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৬:২৪ পিএম
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। ছবি : সংগৃহীত
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া রায় পরিবর্তনের জন্য প্রতারণা, জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সদ্য আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (১৮ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ বিথির আদালতে এই মামলার আবেদন করেন ইমরুল হাসান নামে এক আইনজীবী।
এ সময় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান। পরবর্তীতে আদালত মামলা গ্রহণের মতো উপাদান না থাকায় তা খারিজ করে দেন।
আইনজীবী ইমরুল হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল। এরপর থেকে নির্বাচনে সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। এভাবে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিট আন্দোলনকারী পক্ষই আপিল বিভাগে আপিল করেন।
তবে এম সলিম উল্লাহ অসুস্থতার কারণে মারা যাওয়ায় আব্দুল মান্নান খান নামের আরেকজন আইনজীবী রিট আবেদন এগিয়ে নিয়ে যান। ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। অনেকেই এর পক্ষে মত দেন।
এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন। তবে অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য বিচারপতি খায়রুল হক আমলে না নিয়ে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এজন্য তড়িঘড়ি করে আপিল বিভাগের ৭ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য নির্ধারণ হলে ৬ বিচারপতির তিন জনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। কিন্তু অপর তিন বিচারপতি ভিন্ন মত তুলে ধরলে মামলার ফলাফল টাই হয়। ফলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনসহ জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দেওয়ায় তিনি আর স্বাক্ষর করেননি এবং নথি নিজ জিম্মায় বাসায় নিয়ে যান। ২০১২ সালের ১৭ মে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। রায় প্রদানের ১৬ মাস ৩ দিন পর পরে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করেন সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ রায় প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এ বি এম খায়রুল হক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কর্তৃক বিগত ২০১০ সালের ১ অক্টোবর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।