প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৮:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪৬ পিএম
হাইকোর্ট। ছবি : সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদ্যমান বিভিন্ন কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
রবিবার (১৪ জুলাই) বিকালে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ১১ জুলাই রায়ের ‘কার্যকরী ও নির্দেশনা’ অংশ প্রকাশ করা হয়। তবে আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে হাইকোর্টের এ রায় এখন কার্যকর হবে না। আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হলো।
এতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ ও প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেন।
হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ৪ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ওঠে। সেদিন সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ শুনানি মুলতবি করেন। এর মধ্যে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী গত মঙ্গলবার আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।
কোটা পূরণ না হলে মেধাতালিকা থেকে নেওয়া যাবে
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ; ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগে তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো।
একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ (যদি অন্যান্য থাকে) সব কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।