চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ২২:১৫ পিএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪ ২০:১২ পিএম
দুই শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রবা ফটো
সন্তান চুরির অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন মুন্নি আকতার। চট্টগ্রামের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে করা ওই মামলার তদন্তে বের হয়ে এসেছে ভিন্ন তথ্য। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে এসেছে- চুরি নয়, পারস্পরিক সম্মত্তিতে জমজ মেয়ে ও ছেলেসন্তানকে বিক্রি করেছেন মুন্নি আকতার দম্পতি। ছেলেসন্তানকে বিক্রি করেছেন তিন লাখ টাকায়, মেয়েকে বিক্রি করেছেন এক লাখ টাকায়।
শনিবার (৮ জুন) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ১ নম্বর রাজানগর ইউনিয়নের বি.এ হেডমাস্টার বাড়ি থেকে পাঁচ মাস পাঁচ দিন বয়সি ভাই এবং নগরীর বায়েজিদ থানার অক্সিজেন এলাকা থেকে যমজ বোনকে উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (৯ জুন) চট্টগ্রাম মহানগর পিবিআই পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাশের পলি হাসপাতালে মুন্নি আকতারের যমজ সন্তান হয়। হাসপাতালের ডাক্তার ও মুন্নি আকতারের স্বামী মিলে সন্তানদের (১ ছেলে ও ১ মেয়ে) অজ্ঞাত নারীদের হাতে তুলে দেন। তাদের বড় মেয়ে ও ছেলে এসবের প্রতিবাদ করলে শৌচাগারে আটকে রাখা হয়। পরে এসব বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসককে জানালে নবজাতক দুটি অসুস্থ থাকায় অন্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। মামলাটি আদালত গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে, মুন্নি আকতার সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর আল্ট্রাস্নোগ্রাফি করে জানতে পারেন তার গর্ভে জমজ সন্তান রয়েছে। এরপর স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে গর্ভের জমজ সন্তানকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সঙ্গে ঘটনাক্রমে সীতাকুণ্ডের রাশেদা বেগমের পরিচয় হয়। রাশেদা বেগম তাদের আশ্বস্ত করেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে পছন্দমতো নবজাতক ছেলেমেয়ে বিক্রি করে দিতে পারবেন। পরে রাশেদা বেগম সন্তান নেওয়ার জন্য দুই নারীর সঙ্গে সন্তানসম্ভবা মুন্নি আকতারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
সেই অনুযায়ী ৩ জানুয়ারি নগরীর একটি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নবজাতক ছেলে তিন লাখ টাকায় শিরু আক্তার এবং মেয়েকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে রুনা আক্তার নামে দুই নারীর কাছে বিক্রি করে দেন। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রাশেদা বেগম পান এক লাখ টাকা। ঘটনার বেশ কিছু দিন পরে মুন্নি আকতারের স্বামী তাকে মারধর করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে গেলে মুন্নি আকতার ক্ষিপ্ত হন। পরে এ ঘটনায় স্বামীকে প্রধান আসামি করে মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন মুন্নি আকতার।
পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, ‘মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি, চুরি নয়, টাকার বিনিময়ে জমজ সন্তানকে বিক্রি করে দিযেছেন মা-বাবা। পরে সেই অনুযায়ী আমরা শনিবার দুই শিশুকে উদ্ধার করার পর আজ (রবিবার) আদালতে হাজির করা হলে আদালত দুই শিশুকে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল (সোমবার) ট্রাইব্যুনালে দুই শিশুর উপস্থিতিতে মামলাটির শুনানি হবে।’