প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৫ এএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৪ এএম
ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানে শুক্রবার ভোরে তিনটি ড্রোন ভূপাতিত হয়। ছবি : সংগৃহীত
ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে অন্তত তিনটি বিকট শব্দ হয়েছে। ভূপাতিত হয়েছে তিনটি ড্রোন। ড্রোনগুলো কী ইসরায়েল পাঠিয়েছিল? না ইরানের ভিতর থেকে ওড়ানো হয়েছিল? এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
প্রায় একই সময়ে সিরিয়া ও ইরাকেও ড্রোন হামলা হয়েছে। হামলায় বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে সিরিয়া। হামলার জন্য দেশটি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইরাক কিছু বলেনি। সিরিয়ায় ইরানি সেনা রয়েছে। আর ইরাকে ইরানের সহায়তাপুষ্ট একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে।
হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তবে হামলার মাত্রা নিয়ে তারা কিছু বলেননি।
পরবর্তীতে ইতালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানের হামলা চালানোর আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল ইসরায়েল।
রয়টার্স জানায়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরানে হামলা চালানো হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু শুক্রবার ভোরে ইস্পাহানের বিস্ফোরণ নিয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইসরায়েল।
তবে ইসরায়েলের উগ্রডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন জিভির শুক্রবারের হামলার পর সমাজমাধ্যম এক্সে টুইট করেছেন। এক শব্দে তিনি বলেছেন, ‘দুর্বল’। অর্থাৎ দুর্বল হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের ভাষ্য
১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে বড় ধরনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানের এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ৯৯ শতাংশ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের সহায়তা নিজেদের ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই ধ্বংস করে ইসরায়েল।
তেহরান টাইমসকে ইস্পাহান প্রদেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক প্রতিনিধি জেনারেল মিহানদোস্ত বলেছেন, ইস্পাহানের পূর্বাঞ্চলে শুক্রবার ভোরে বড় শব্দ শোনা গেছে। কারণ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা সেখানে সন্দেহজনক কিছু বস্তু ধ্বংস করা হয়েছে। শহরে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা বড় ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
ইস্পাহানের ব্রিগেডিয়ার সিয়াভাশ মিহান্দুস্তও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
ইরানের এক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেশটির গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাইর থেকে ইরানে কোনো হামলা হয়নি। অনুপ্রবেশকারীরা দেশের ভিতর থেকে ইস্পাহানে ড্রোন উড়িয়েছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, মধ্যরাতের পর ইস্পাহানের আকাশে তিনটি ছোট ড্রোন দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। ড্রোনগুলো লক্ষ্যে আঘাত হানার আগে আকাশেই ধ্বংস করা হয়।
ইস্পাহান কেন লক্ষ্য
ইস্পাহান ইরানের মধ্যাঞ্চলের একটি শহর। এটি দেশটির ইস্পাহান প্রদেশের রাজধানী। এতে দেশটির একাধিক পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে, রয়েছে বেশ কয়েকটি অস্ত্র তৈরির কারখানা। দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানবন্দরও মধ্যযুগের এ শহরটিতে অবস্থিত।
আশঙ্কা করা হচ্ছিল ১৩ এপ্রিলের হামলার প্রতিশোধ নিতে গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটিতে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল।
হামলা নিয়ে ধোঁয়াশা কেন
ইরানের ইস্পাহানে হামলা নিয়ে ধোঁয়াশা কেন, তার একাধিক উত্তর রয়েছে।
প্রথম, ইরান যদি স্বীকার করে নেয় ইসরায়েল হামলা করেছে, তাহলে তাদের পাল্টা হামলা চালাতে হয়। ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা কয়েক দিন ধরে এমনটি ঘোষণা দিয়েছিল।
দ্বিতীয়, ১৩ এপ্রিলের হামলার জবাবে ইরানে হামলা না চালাতে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ প্রায় সব মিত্রের চাপ ছিল। কিন্তু এত বড় হামলার জবাব না নিয়ে একদম চুপ থাকাটা এক ধরনের নৈতিক পরাজয়। আবার এত ছোট হামলার দায় স্বীকারও লজ্জার। তাই ইসরায়েল হামলার কথা স্বীকার করেনি।
তৃতীয়, ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ঠেকাতে বহুপক্ষীয় নিবিড় কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কূটনৈতিক পর্যায়েই ইরানে প্রতীকী হামলার সিদ্ধান্ত হয়। এটা ইসরায়েলের মিত্রদের জন্য সুবিধজনক।
তবে ইরানে ‘সীমিত’ হামলার বিনিময়ে ইসরায়েলের ‘লাভ’ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এখন ইসরায়েল গাজার রাফায় স্থল অভিযানের ‘সবুজ কার্ড’ পেয়েছে। গাজার উদ্বাস্তু আকীর্ণ এ অঞ্চলে ইসরায়েলের স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে দেশটির মিত্রদের আপত্তি ছিল। এখন সে আপত্তি থাকবে না।
১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) দুই জেনারেলসহ মোট সাত সদস্য নিহত হয়। প্রতিক্রিয়ায় ১২ দিন পর শনিবার রাতে ইসরায়েলের দিকে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান।
তবে ইসরায়েলের তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রায় ৯৯ শতাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল সীমান্তে ঢোকার আগেই ধ্বংস করার দাবি করেছে দেশটি। ইরানি হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পাশাপাশি সৌদি আরব ও জর্ডান সহায়তা করেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র : তেহরান টাইমস, গার্ডিয়ান, আলজাজিরা