× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার ছয় মাস, যুদ্ধবিরতির খবর কী

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৭ পিএম

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২০ পিএম

ইসরায়েলের ছয় মাসের হামলায় গাজা পরিত্যক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলের ছয় মাসের হামলায় গাজা পরিত্যক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

ঝাঁকে ঝাঁকে বোমারু বিমান, সাইরেন, বোমা ও গোলা হামলার বিকট শব্দ, সর্বত্র ধ্বংসযজ্ঞ, আহতের আর্তনাদ, লাশের গন্ধ, চোখ যেদিকে যায় শুধু ধ্বংস আর ধ্বংসযজ্ঞ। ‍যুদ্ধের সব নিয়ম লঙ্ঘন করে হামলা চালানো হয়েছে হাসপাতালে, জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে, স্কুলে, মসজিদ ও গির্জায়। টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার পরিচিত চিত্র এসব।  

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা রবিবার (৭ এপ্রিল) ছয় মাস পূর্ণ করে সাত মাসে প্রবেশ করেছে। বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নির্বিচারে ফিলিস্তিনি হত্যায় ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি তারাও প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। এ অবস্থায় রবিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যস্থতাকারী কাতার, ইসরায়েল ও হামাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আরেক দফায় আলোচনায় বসছেন। 

জানা গেছে, রবিবারের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) প্রধান বিল বার্নস ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি অংশ নেবেন। হামাস ও ইসরায়েল তাদের প্রতিনিধিদল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

হামাস যুদ্ধবিরতির শর্তে নিজেদের ১৪ মার্চের প্রস্তাবে অটল রয়েছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাময়িক নয়, যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। বাস্তুচ্যুতদের ঘরে ফিরতে দিতে হবে। ত্রাণ কার্যক্রম অবাধ করতে হবে। কয়েক ধাপে জিম্মি বিনিময় হবে।  

২৫ মার্চ গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো একটি বিল পাস হয়। এর আগে ১৫ সদস্যের সংস্থাটিতে একাধিকবার গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আলোচিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে তা পাস হতে পারেনি। 

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েলের অবস্থান, তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতি চায়। সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে না। হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হবে।

এ অবস্থায় রবিবারের যুদ্ধবিরতির আলোচনা ফলপ্রসূ কোনো সংবাদ বয়ে আনবে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তবে দেশে জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্রমশ শিথিল হওয়ায় ইসরায়েল কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

এদিকে ছয় মাসের যুদ্ধে ৪৫ বর্গকিলোমিটারের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাটিতে ইতোমধ্যে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের অধিকাংশ শিশু ও নারী। উপত্যকাটি ২৩ থেকে ২৪ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে স্থানচ্যুত হয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। বিধ্বস্ত উপত্যকাটি প্রায় শতভাগ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে জাতিসংঘ। 

দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না ইসরায়েল। উল্টো ১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) পরিবহনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকসহ মোট সাতজন ত্রাণকর্মী। 

ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় ইসরায়েলের একান্ত মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি প্রথমবারের মতো যুদ্ধবন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। 

ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুই সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্তের কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। চলমান গাজা গণহত্যায় ইসরায়েলের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে দেশটির কোণঠাসা অবস্থার প্রকাশ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

হামলার পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ডব্লিউসিকে। অন্য ত্রাণ সংস্থাগুলো মৃত্যুপুরীটিতে কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করছে। 

ডব্লিউসিকের গাড়িবহরে হামলার একই দিনে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামালা চালিয়েছে ইসরায়েলে। এতে ইরানি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এলিট বাহিনী আল-কুদস ফোর্সের এক কমান্ডার, পাঁচ সদস্যসহ মোট ১১ জন নিহত হয়। ইরান প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিশোধ নেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে থাকতে আহ্বান জানিয়েছে তেহরান। 

রবিবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার উপদেষ্টা ইয়াহিয়া রাহিম সাফাভি হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি স্বার্থে আঘাত করার আমাদের বৈধ অধিকার তৈরি হয়েছে। বিশ্বের কোনো স্থানেই দেশটির দূতাবাস আর নিরাপদ নয়।

৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৭০ জন নিহত হয়। নিহতদের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। এতে বিদেশি ও দ্বৈত নাগরিকও রয়েছে। আহত হয় আরও প্রায় চার হাজার। 

হতাহতের পাশাপাশি হামাস ও ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে আসে। নভেম্বরের শেষ এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে হামাস ১২০ জনকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরায়েলি অভিযানে জিম্মিদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। হামাস ও ইসলামিক জিহাদের হাতে এখনও প্রায় ১০০ জন মতো জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামাসের হামলার জবাবে কয়েক ঘণ্টার মাথায় গাজায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু। তিন দিক থেকে আকাশ, নৌ ও সেনাবাহিনী একযোগে হামলা শুরু করে। ক্রমশ হামলার তীব্রতা ও পরিধি বাড়িয়েছে ইসরায়েল। 

যুদ্ধের প্রথম দিকে উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। তখন বাসিন্দাদের মধ্য ও দক্ষিণ গাজার দিকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় দেশটি। বলা হয়েছিল, ওইসব স্থান তাদের জন্য নিরাপদ। কিন্তু দক্ষিণ দিকেও যুদ্ধের শুরু থেকে বিমান হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। বর্তমানে দক্ষিণ দিকের ছোট ছোট শহর ও অঞ্চলে স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। 

উত্তর গাজা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে দক্ষিণের খান ইউনুস ও রাফা শহরেই আশ্রয় নিয়েছে অধিকাংশ গাজাবাসী। এখন খান ইউনুসে তীব্র স্থল যুদ্ধ চলছে। হাসাসের পাশাপাশি উপত্যকাটির আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরামিক জিহাদও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। 

শনিবার খান ইউনুসে ইসরায়েলের ১৪ সেনা হত্যার দাবি করেছে হামাস। গাজা যুদ্ধে এ নিয়ে মোট ৬০৪ জন সেনা হারাল ইসরায়েল। 

অন্যদিকে শনিবার খান ইউনুসে হামাসের এক শীর্ষ কমান্ডার আকরাম সালমাহকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। তা ছাড়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় হামাস ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রায় ১২ হাজার যোদ্ধা হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। 

ইসরায়েলের দাবি, যুদ্ধের ছয় মাসে লেবাবনে হিজবুল্লার অবস্থানে ৪ হাজার ৭০০টি হামলা চালিয়েছে তারা। এতে ইরান সমর্থিত ও হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল হিজবুল্লাহর ৩০ কমান্ডারসহ প্রায় ৩৩০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। 

রবিবার ভোরেও পূর্ব লেবাননে হিজবুল্লার অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত হামলা অব্যাহত রয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হয়েছিল, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে ঘোষণা দিতে পারে। কিন্তু সে ঘোষণা এখন পর্যন্ত আসেনি।

গাজায় নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে আরব সাগরে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের পণ্যবাহী জাহাজে হামলা শুরু করেছিল ইয়েমেনের হুতিরা। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইয়েমেনে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তারপরও কার্গো জাহাজে হামলা অব্যাহত রেখেছিল হুতিরা। অবশ্য দুয়েক সপ্তাহ ধরে হুতিদের হামলা কমেছে। কিন্তু ইরানি কমান্ডার হত্যার ইস্যুতে হুতিরা ফের বড় ধরনের হামলা শুরু করতে পারে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা