ইসরায়েলকে কঠিন জবাব দেওয়ার ঘোষণা ইরানের

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরানের কনস্যুলেট ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। গত সোমবার রাতের এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১১-তে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর (ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর-আইআরজিসি) দুই কমান্ডার রয়েছেন। নিহতদের সবাই যোদ্ধা ছিলেন বলে জানা গেছে। এই প্রাণঘাতী হামলার কঠিন জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলা এবং ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। বিশেষ করে গাজা যুদ্ধের ছয় মাসের মাথায় এমন অবস্থা বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইরান কী ধরনের প্রতিশোধ নেয়, তার প্রভাব কতটা ভয়ংকর হয়; তার ওপর নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।

আইআরজিসি জানিয়েছে, হামলায় তাদের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলেছে, ওই হামলার খবরের ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। গাজায় চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এমনিতেই ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান ও মিত্রদেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা চলছে। সোমবারের ঘটনার পর এ উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল।

আইআরজিসি বলছে, হামলায় তাদের যে সাত সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজা জাহেদি ও উচ্চপর্যায়ের আরেকজন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজী রাহিমি আছেন।

সিরিয়ান অবজারভেটরির প্রধান রামি আবদেল রহমান এএফপিকে বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজন ইরানের, দুজন সিরিয়ার ও একজন লেবাননের নাগরিক। তারা সবাই যোদ্ধা, কেউই বেসামরিক নাগরিক নন।

সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানি দূত হোসেন আকবরি জানিয়েছেন, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান থেকে দামেস্কের কনস্যুলেটে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। হামলায় পুরো ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের ভেতর যারা ছিলেন, তারা সবাই হতাহত হয়েছেন। মৃতদেহগুলো উদ্ধার ও আহত ব্যক্তিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনার কাজ চলছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, হামলায় আইআরজিসির বৈদেশিক অভিযান শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রেজা জাহেদিও নিহত হয়েছেন।

হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া ভবনটি ইরানি দূতাবাসের পাশে অবস্থিত। এর সামনের অংশে কাসেম সোলাইমানির একটি বড় ছবি লাগানো। সোলাইমানিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ডের স্থপতি বলা হয়ে থাকে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় সোলাইমানি নিহত হন।

খামেনির প্রতিশোধের ঘোষণা

ইরানের কনস্যুলেটে হামলার কঠিন জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া হবেই।

এক বার্তায় খামেনি বলেছেন, দুষ্ট ইহুদিবাদী শাসক আমাদের সাহসী পুরুষদের হাতে শাস্তি পাবে। আমরা তাদের এই অপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য অনুতপ্ত করব।

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলার উত্তর দেওয়া হবে। 

ইব্রাহিম রাইসি আরও বলেছেন, ‘প্রতিরোধ ফ্রন্ট যোদ্ধাদের বিশ্বাস এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার পরাজয় এবং ব্যর্থতার পর ইহুদিবাদী শাসক নিজেকে বাঁচানোর সংগ্রামে অন্ধ হত্যাকাণ্ডকে তার এজেন্ডায় রেখেছে।’

সিরিয়ার মিত্র রাশিয়ার অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার বিষয়ে আলোচনা করবে। সূত্র : রয়টার্স, এএফপি ও আলজাজিরা