প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:২৪ পিএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪ ০০:০৫ এএম
ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। যদিও ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে শর্তহীনভাবে জিম্মিদের মুক্তি দিতে বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪টি দেশ।
সোমবার (২৫ মার্চ) নিরাপত্তা পরিষদে এ ভোটের আয়োজন করা হয়।
ভোটের পর জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস করতে বিলম্বের জন্য হামাসকে দায়ী করেন। এ ছাড়া ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমরা রেজল্যুশনের সবকিছুর সঙ্গে একমত হইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবে হামাসের নিন্দা যোগ করার জন্য আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে।’
বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হলে সেখানে মানবিক সহায়তা জোরদার করা হবে বলে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভিয়ের বলেন, ‘গাজা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের নীরবতা বধিরতার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত একটি সমাধান বের করতে নিরাপত্তা পরিষদের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই সংকট এখনও শেষ হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। রমজান শেষ হতে আর দুই সপ্তাহ বাকি, এর মধ্যেই আমাদের একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই প্রস্তাব তাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না।
তবে আলজাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদে এটি প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য অর্জন। প্রায় ছয় মাস পর ভোট.... যা প্রায় সর্বসম্মতভাবে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তিনবার তার ক্ষমতা (ভেটো) ব্যবহার করেছে। কিন্তু এবার আর ঠেকাতে পারেনি।’
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসের বিষয়ে জাতিসংঘের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেছেন, তারা এই প্রস্তাবে ইসরায়েলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার কোনো প্রকার নিন্দা জানায়নি। যুক্তরাজ্য এই হামলার ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা’ জানাচ্ছে।
যদিও তিনি বলেছেন, আমরা অবিলম্বে এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চাই। কারণ গাজার নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিকদের দুর্ভোগ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং আমাদের সবার চোখের সামনেই একটি চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ ছাড়া মানবিক বিরতি থেকে দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই শান্তির দিকে কীভাবে এগোনো যায়, সেই পথ ও সমাধান আমাদের খুঁজতে হবে। এর জন্য একটি আন্তর্জাতিক সাহায্য প্যাকেজসহ পশ্চিম তীর ও গাজার জন্য একটি নতুন ফিলিস্তিন সরকার গঠন করাও প্রয়োজন।’
ভোটের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি নেতারা। তারা এটিকে সঠিক পথে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, গাজায় হামলা বন্ধ করার জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হওয়া দরকার।
সৌদি আরবের মানসুর বলেন, ‘অবশ্যই এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটি যুদ্ধ এবং আমাদের লোকজনের ওপর নৃশসংতা শেষ হওয়ার ইঙ্গিত।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। আহত হয় ৪ হাজারের মতো। হামাস জিম্মি করে ২৪০ থেকে ২৫৩ জনকে। ইসরায়েল ধারণা করছে, এখনও প্রায় ১৩০ জন হামাসের কাছে জিম্মি আছে।
হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৩ হাজার শিশুও আছে। ৮ হাজার ৬৬৩টি শিশুসহ ৭৪ হাজার ২৯৮ জন আহত হয়েছে।
অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অচলাবস্থায় ছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সম্মত হতে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি।