প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ২২:২৮ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪৯ এএম
দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সংগৃহীত ফটো
মদ নীতিতে ষড়যন্ত্র করে অবৈধ অর্থ আত্মসাতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতেই থাকছেন। আগামী সাত দিন হেফাজতে রেখে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সংস্থাটি। শুক্রবার (২২ মার্চ) বিশেষ সিবিআই আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন বিচারক কাবেরী বাওয়েজা। যদিও কেজরিওয়ালকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছিল ইডি।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পর দিল্লিসহ পুরো ভারতে বিজেপি সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিন্দা ও ক্ষোভ জানাচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের এই ঘটনাকে ভোটে জেতার ‘হীন চেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এরই মধ্যে বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একজন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছেন। কেজরিওয়ালকে মুক্ত করতে তারা পথে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় কেজরিওয়ালকে। তার রাতটা কাটে ইডি দপ্তরে। নিয়ম মোতাবেক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে আদালতে হাজির করানো হয়। শুক্রবার বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজার এজলাসে কেজরিওয়ালের মামলার শুনানি ছিল। ইডির পক্ষে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু শুক্রবার আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। তিনি দাবি করেন যে, মদ নীতি মামলায় ‘নাটের গুরু’ কেজরিওয়াল।
ইডি আদালতে জানায়, অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। আম আদমি পার্টির প্রধান কেজরিওয়ালের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আরও জানায়, অপরাধে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কেজরিওয়াল। কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার জন্যই ওই মদ নীতি প্রণয়ন করেছিল তার দল। দুর্নীতির টাকা গোয়া ও পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগিয়েছিল দলটি।
আদালতে ইডির পক্ষে দাবি করা হয়েছে, এই মামলায় ‘সাউথ গ্রুপ’কে সুবিধা পাইয়ে দিতে টাকা চেয়েছিলেন কেজরিওয়াল। এই দাবির পক্ষে বয়ানও আছে বলে আদালতে জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুধু তা-ই নয়, হাওয়ালার মাধ্যমে সমস্ত টাকার লেনদেন হয়েছে। ইডি প্রথমে দাবি করেছিল, দলটির নেতারা এই মামলায় ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। গতকাল আদালতে ইডি দাবি করে, সেই টাকার অঙ্কের পরিমাণ ৬০০ কোটিতেও পৌঁছতে পারে। সেই ব্যাপারে সরাসরি কেজরিওয়ালের সংযুক্তি আছে বলে আদালতে জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
কেজরিওয়ালের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে তার আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ইডির গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘ইডি একটা নতুন পন্থা নিয়েছে। আপনার কাছে একজন সাক্ষী আছে, যিনি প্রথম বা দ্বিতীয় বয়ানে কেজরিওয়ালের নাম নেননি। আপনি তাকে গ্রেপ্তার করেন। তার পর তার জামিনের তীব্র বিরোধিতাও করেন। শেষে দেখা যায় তিনি আপনাদের কথা মেনে নেন। তার পর যে বয়ান দেন তাতে কেজরিওয়ালের নাম ছিল।’ সিংভি আরও জানান, বিশ্বাসযোগ্য কারণ ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায় না। কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির ক্ষেত্রেও কোনো বিশ্বাসযোগ্য কারণ দেখাতে পারেনি ইডি।
দিল্লির আবগারি মামলায় আপ প্রধান কেজরীকে মোট ৯ বার সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু আট বারই হাজিরা এড়িয়ে যান তিনি। শেষ পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান কেজরিওয়াল। হাইকোর্ট তা খারিজ করলে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। শুক্রবার শীর্ষ আদালতে তার মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু শুনানির আগেই আবেদন প্রত্যাহার করে নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
প্রতিবাদে ইন্ডিয়া জোট
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। শুক্রবার বিকালে বিরোধী জোটের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এক স্মারকলিপি পেশ করেন। তাতে কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ক্ষেত্র সবার জন্য সমান থাকা দরকার। সেই দায়িত্ব কমিশনের। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন সংস্থার অপব্যবহার করে সেই পরিবেশ নষ্ট করছে। এর ফলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন কংগ্রেসের কে সি বেনুগোপাল ও অভিষেক মনু সিংভি, তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ ব্রায়েন ও নাদিমুল হক, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, আম আদমি পার্টির সন্দীপ পাঠক ও পঙ্কজ গুপ্ত, এনসিপির (শারদ পাওয়ার) জিতেন্দ্র আওহাদ, এসপির জাভেদ আরি ও ডিএমকের পি উইলসন।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর অভিষেক মনু সিংভি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের বিষয় নয়। এটা সংবিধানের প্রশ্ন। স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হলো। সেটাও করা হয়েছে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর।
কংগ্রেসের এই নেতা আরও বলেন, ‘সংসদের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসবের প্রমাণ আমরা কমিশনকে দিয়ে বলেছি, এসব যাতে না হয়, তা দেখা তাদের দায়িত্ব। তারা যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো যা করছে, তা সম্পূর্ণভাবে কমিশন নির্দেশিত আদর্শ আচরণবিধির পরিপন্থী।
সূত্র : এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার পত্রিকা