প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ২০:০২ পিএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ২০:২০ পিএম
পবিত্র আক-আকসা মসজিদ। ছবি : সংগৃহীত
পবিত্র রমজান ঘিরে পুরো ফিলিস্তিনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম গণহত্যার
পাশাপাশি পূর্ব জেরুজালেমে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে পবিত্র আক-আকসা মসজিদে প্রার্থনার
উদ্দেশ্যে যাওয়া ফিলিস্তিনিরা। এ ছাড়া পশ্চিম তীরেও চলছে গণগ্রেপ্তার। অনাহার, রক্তপাত,
নির্যাতন আর গণকবরের বীভৎস অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে রমজানে রোজা রাখা শেষ পর্যন্ত কতটা
কষ্টের হয়, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা শোনা গেছে সাধারণ ফিলিস্তিনি ও ফিলিস্তিনের বেসামরিক কর্তৃপক্ষের
মুখে।
ফিলিস্তিনিরা যখন রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন
অনেকেই আশঙ্কা করছে যে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং উগ্র জায়নবাদী ইসরায়েলিরা অশান্তি উস্কে দিতে পারে। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। এত আতঙ্কের
মধ্যে তারা কীভাবে রোজা রাখবে!
পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কথা বলেছে আলজাজিরা। তাদের কথায় উঠে এসেছে- রমজানের জন্য কোনো প্রস্তুতিই তারা
নিতে পারেনি। অনেকে শুধু গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য প্রার্থনা করছে। যেখানে
৭ অক্টোবর কাসাম ব্রিগেড এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র যোদ্ধাদের ইসরায়েলে
চালানো হামলার প্রতিশোধ নিতে এরই মধ্যে দেশটি গাজার ৩১ হাজার ৮৫ জন বাসিন্দাকে হত্যা
করেছে।
অন্যরা আশঙ্কা করছে- ইসরায়েলি
কর্তৃপক্ষ এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারী অতি-ডানপন্থি জায়নবাদীরা পবিত্র মাসে সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ করবে, যেমনটি আগে করেছিল তারা। তারা সহিংসতার
উস্কানি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের পিষে মারবে।
পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি মানবাধিকার আইনজীবী
মুনির নুসিবাহ বলেছেন,
‘আমি সম্ভাব্য উস্কানি নিয়ে সত্যিই চিন্তিত। আমরা অতীত থেকে
শিখেছি, রমজান মাসে পূর্ব জেরুজালেমে যত বেশি
পুলিশি উপস্থিতি এবং পুলিশি হস্তক্ষেপ থাকবে, ততই আমরা সংঘর্ষ দেখতে
পাব।’
সহিংসতার ইতিহাস
রমজানের সময়, ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান
আল-আকসা মসজিদ ঘিরে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা দেয়। অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা
মসজিদে প্রার্থনা করতে চায়। তবু ইসরায়েলি পুলিশ অতীতের
মতো এই পবিত্র মসজিদে প্রবেশে বাধা দিয়ে যাচ্ছে এবং ইবাদতরত মুসল্লিদের
ওপর আক্রমণ করছে।
গত বছর ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি
পুলিশকে ইতিকাফে হস্তক্ষেপ না করতে বাধা দিয়েছিল। এ জন্য তারা আল-আকসা
মসজিদের ভেতরে এক ধরনের ব্যারিকেড
তৈরি করেছিল। তবে তা ভেঙে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং নারী-বয়স্কসহ উপাসকদের নির্বিচারে
মারধর করেছিল। অন্তত ৪৫০ ফিলিস্তিনি পুরুষকে
গ্রেপ্তার করেছিল।
ড্যানিয়েল সিডম্যান নামে একজন
আইনজীবী ও জেরুজালেমের বাসিন্দা বলেছেন,
‘আল-আকসা সম্পর্কে সহজাতভাবে সহিংস কিছু নেই এবং অবশ্যই রমজান সম্পর্কে
সহজাতভাবে সহিংস কিছু নেই। এটি স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিছু লোক ধারণা করে যে এর সবকিছুই ইসলাম সম্পর্কে।’
ফিলিস্তিনিরা বেশিরভাগ সহিংসতার জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের
গৃহীত উস্কানিমূলক পদক্ষেপকে দায়ী করে। কারণ তারা শহর থেকে পবিত্র মসজিদ প্রাঙ্গণ সবই দখল করে। ইসরায়েল সরকারের নির্দেশে ইসরায়েলি পুলিশ প্রায়ই দলে দলে জায়নবাদী ইহুদিদের ভেতরে
প্রবেশের অনুমতি দেয়। ইহুদিরা আল-আকসা
মসজিদকে টেম্পল মাউন্ট হিসেবে উল্লেখ করে। ২০১৫ সালে ইসরায়েল, জর্ডান, ফিলিস্তিন
ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে যে স্থিতাবস্থা চুক্তি করেছিল, সেটি
হরহামেশা ইসরায়েলি বাহিনী লঙ্ঘন করে।
চুক্তিতে বলা আছে, আল-আকসা
মসজিদ একচেটিয়াভাবে মুসলমানদের প্রার্থনার স্থান।
তবু নির্দিষ্ট দিন এবং অনুষ্ঠান উপলক্ষে অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। যাই হোক, অনেকেই
আশঙ্কা করছেন,
জায়নবাদী উগ্র ডানপন্থি ইসরায়েলি মন্ত্রীরা
মসজিদে প্রার্থনারত ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে কটূক্তি করা বা সংঘর্ষের অনুমতি দিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতময় করে তুলতে পারেন।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের ২৭ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিনি বলেন, সবাই ভয়ের মধ্যে সতর্কও রয়েছে।
তাদের আশঙ্কা, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের উস্কানি
দেওয়ার চেষ্টা করবে। ইসরায়েলি সরকার বরাবরই ফিলিস্তিনি
জনগণের বিরুদ্ধে।
ইসরায়েলের সংঘাত সৃষ্টির স্থান
ইসরায়েলি পুলিশ নিয়ন্ত্রিত হয় দেশটির
জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অতি-ডানপন্থি
জায়নবাদী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের নির্দেশে। ফেব্রুয়ারিতে তিনি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি
বাসিন্দাদের রমজান মাসে মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা পরে জেরুজালেমে শান্তি বজায় রাখার
আপাত প্রচেষ্টায় তার পরামর্শকে অগ্রাহ্য করেন। তবে তারা বলেছিলেন, নিরাপত্তার
জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
ড্যানিয়েল সিডম্যান বলেছেন, বেন-গভির
এখনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন, এমনকি যদি আল-আকসার
মূল ভবনের ভেতরে কমান্ডিং অফিসারদের প্রবেশ করতে নির্দেশ দিতে পারেন। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বেন-গভির আল-আকসার গেটে
যা ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণ করছেন না। তার মানে এইও নয় যে তিনি মসজিদ থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না।’
ইব্রাহিম মাতার নামে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের একজন খ্রিস্টান
ফিলিস্তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, পূর্ব জেরুজালেম বা
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রার্থনাকারীদের বিরুদ্ধে
যেকোনো সহিংসতা ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।