প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫২ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪১ পিএম
ইসরায়েলি হামলায় একসঙ্গে ১০৩ জন স্বজন হারানো আহমাদ আল-গুফেরি। ছবি : সংগৃহীত
গাজা শহরে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ১০৩ জন স্বজনকে হারিয়েছেন ফিলিস্তিনের আহমাদ আল-গুফেরি। একসঙ্গে এত স্বজন হারিয়ে অতিশোকে পাথর হয়ে পড়েছেন তিনি।
৮ ডিসেম্বর ইসরায়েলের বিমান হামলায় মা, ভাই, স্ত্রী, সন্তানসহ নিজের সব স্বজনদের হারিয়েছেন গুফেরি। হামলার সময় ৫০ মাইল দূরের দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে আটকা পড়ে থাকায় তিনি বেঁচে যান।
৭ অক্টোবর যখন হামাস ইসরায়েলে হামলা করে তখন আহমাদ তেল আবিবের একটি আবাসন নির্মাণের প্রকল্পে কাজ করছিলেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী অবরোধ দিয়ে দেওয়ায় তিনি আর তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের কাছে ফিরে যেতে পারেননি।
যখন ফোনের সংযোগের অনুমতি দেওয়া হতো তখন প্রতিদিন তিনি একই সময়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেন। ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় যখন হামলা হয় তখন তিনি তার স্ত্রী শিরিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।
গুফেরি বলেন, ‘সে জানত সে মারা যাবে। সে আমাকে বলেছিল সে যদি কখনও আমার সঙ্গে খারাপ কিছু করে থাকে তার জন্য তাকে ক্ষমা করে দিতে। এটাই আমাদের মধ্যে হওয়া শেষ ফোনের শেষ ছিল।’
সেদিন সন্ধ্যায় তার চাচার বাসায় বোমা হামলায় তার স্ত্রী, তিন মেয়ে- তালা,লানা এবং নাজলা নিহত হয়। এই হামলায় তার মা, চার ভাই ও তাদের পরিবার, তার কয়েক ডজন খালা, চাচা, চাচাতো ভাই-বোন নিহত হন। সব মিলিয়ে ১শ জনেরও বেশি নিহত হন। দুই মাসেরও অধিক সময় হয়ে গেছে সেই হামলা। এখনও অনেকের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে।
গত সপ্তাহে তার ছোট মেয়ে নাজলার জন্মদিন ছিল। তার দুই বছর হওয়ার কথা ছিল। সেখানে আজ তার মরদেহ বের করা হচ্ছে। তার সন্তানদের মরদেহ ধরে রাখতে পারছিলেন না তিনি। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গুফেরি বলেন, ‘আমার মেয়েরা আমার জন্য ছোট্ট পাখি। আমার মনে হচ্ছে আমি এখনও স্বপ্ন দেখছি। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, আমি তা বিশ্বাস করতে পারছি না।’
তিনি তার মেয়েদের ছবি তার ফোন ও ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে সরিয়ে ফেলেছেন। কেননা সেগুলো দেখলে তিনি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না।
এই হামলায় বেঁচে যাওয়া তার কিছু আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তাদের বাসার প্রবেশদ্বারে প্রথমে একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে। তারা দ্রুত কাছে থাকা তার চাচার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। ১৫ মিনিট পর সেখানে বিমান হামলা হয়। তারা সেখানে নিহত হন।
গুফেরি বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে একটা সবুজ প্লাস্টিকের মগ আগুনে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। পুরো জায়গাটাই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।’
আহমাদ আল-গুভারির একজন আত্মীয় হামিদ আল-গুফেরি। যিনি এই হামলায় বেঁচে গেছেন। তিনি বিবিসিকে জানান, যখন বিমান হামলা শুরু হয় তখন কেবল তারাই বেঁচে যান, যারা দৌঁড়ে পাহাড়ে চলে গেছিল। আর যারা বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিল তারা সবাই নিহত হয়েছে।
আহমাদ আল-গুভারি বলেন, ‘গাজায় আমার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আমি কার কাছে ফিরে যাব? কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে? আমার স্ত্রী বলত, আমিই তার জীবন। এখন আমাকে কে তা বলবে?’
সূত্র : বিবিসি