প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫৭ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৩ পিএম
কৃষককে কাঁদানে গ্যাস দিয়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করছে পুলিশ। ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে। ছবি : সংগৃহীত
ভারতের কৃষক বুধবার দ্বিতীয় দিনে লংমার্চ পুনরায় শুরু করেছে। একাধিক দাবিতে রাজধানী দিল্লি অভিমুখে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দেশটির প্রায় ১ লাখ কৃষক লংমার্চ শুরু করে। লংমার্চের নাম ‘দিল্লি চলো’। রাজধানীর পাশের পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে মঙ্গলবার সকালে ট্রাক্টর নিয়ে লংমার্চ শুরু করে কৃষক।
মঙ্গলবার সকালে লংমার্চ শুরুর পর ওই দিন রাতে তা বিরতি দেওয়া হয়। প্রায় ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে লংমার্চ শুরু করেছে কৃষক। দাবি আদায় করে মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
দিল্লিতে লংমার্চের প্রবেশ ঠেকাতে রাজধানীর সবকটি সীমান্ত ফটকে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। রাজধানীতে প্রবেশের সব ফটকে ব্যারিকেড ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।
দুপুরের দিকে পাঞ্জাব থেকে ব্যারিকেড ভেঙে হরিয়ানায় ঢোকার চেষ্টা কৃষকের। ড্রোনের মাধ্যমে প্রতিবাদী কৃষককে লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ।
কৃষক আন্দোলন প্রতিরোধের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। হরিয়ানা সরকার তড়িঘড়ি দুটি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী জেল তৈরি করেছে। কৃষক মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের আটক করে ওই দুটি জেলে রাখা হবে বলে সূত্রের খবর।
সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে এ আন্দোলনের জেরে অসুবিধার মুখে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে বলে খবর। কৃষকের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এক মাস অর্থাৎ ১২ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে রাজধানীতে।
সরকার কৃষক নেতাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। আজ বুধবার ফের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর মঙ্গলবার রাতে কৃষককে সহিংসতায় না জড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।
দিল্লিমুখী কৃষকের লংমার্চ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্র ও দিল্লি সরকার। কেন্দ্র দিল্লির একটি স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী বন্দিশালা করার প্রস্তাব করেছে। কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল সরকার তাতে রাজি হয়নি।
কেন এ লংমার্চ
২০২০ সালে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে অবস্থানে বসেছিল কৃষক। পরে তিন আইনই বাতিল করা হয়। আর এ আন্দোলনে নামা কৃষকের দাবি ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সব কৃষিঋণ মওকুফ করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের ডাক দিল যারা
কৃষকের দুটি বড় সংগঠন সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও কিষান মজদুর মোর্চা গত ডিসেম্বরে দাবি আদায়ে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয়। দুটি সংগঠনের আওতায় মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশের সাড়ে তিনশ ছোটবড় কৃষক সংগঠন রয়েছে। তবে ২০২০ সালের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা দুই কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত ও গুরনাম সিংহ চারুনি মঙ্গলবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেই। এবার কৃষকের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্য দুই বিখ্যাত কৃষকনেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধের ও জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল।
সরকারের ভয়
২০২০-২১-এ বছরব্যাপী কৃষকের আন্দোলনের সময় কয়েক ডজন কৃষক মারা যায়। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার বড় ধরনের চাপে পড়ে। এবার সে ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটা থেকে বিরত থাকতে চায় সরকার। তা ছাড়া এটা নির্বাচনের বছর হওয়ায় প্রশাসন আরও বেশি সতর্ক। তাই দিল্লির উপকণ্ঠে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। দিল্লিকে দুর্গে পরিণত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার