প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৪ পিএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৩ পিএম
ব্যারিকেডে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। ১৩ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লির সিংগু সীমান্তে। ছবি : সংগৃহীত
ভারতের রাজধানী দিল্লি অভিমুখে একাধিক দাবিতে প্রায় এক লাখ কৃষক লং মার্চ শুরু করেছে। লং মার্চের নাম ‘দিল্লি চলো’। রাজধানী পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ট্রাক্টর নিয়ে লং মার্চ শুরু করেন কৃষকরা।
দিল্লিতে লং মার্চের প্রবেশ ঠেকাতে রাজধানীর সবকটি সীমান্ত ফটকে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ। রাজধানীতে প্রবেশের সব ফটকে ব্যারিকেড ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।
দুপুরের দিকে পঞ্জাব থেকে ব্যারিকেড ভেঙে হরিয়ানায় ঢোকার চেষ্টা কৃষকদের। ড্রোনের মাধ্যমে প্রতিবাদী কৃষকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছুড়েছে পুলিশ।
কৃষক আন্দোলন প্রতিরোধের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। হরিয়ানা সরকার তড়িঘড়ি দুটি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী জেল তৈরি করেছে। কৃষকেরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের আটক করে ওই দুটি জেলে রাখা হবে বলে সূত্রের খবর।
সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে এই আন্দোলনের জেরে অসুবিধার মুখে না পড়েন সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে বলে খবর। কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এক মাস অর্থাৎ ১২ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে রাজধানীতে।
তীব্র যানজট দিল্লিতে
ফের সংবাদ শিরোনামে দিল্লির গাজিপুর, সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমানা। দিল্লিতে ঢোকার প্রায় সমস্ত প্রবেশপথকেই দুর্গের চেহারা দিয়েছে পুলিশ। অধিকাংশ গাড়িকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মঙ্গলবার সকাল থেকেই যানজট শুরু হয় দিল্লির গাজিপুর এবং চিল্লা সীমানায়। দিল্লি থেকে হরিয়ানার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কেও যানজট শুরু হয়। পরিস্থিতি এমনই যে, এক কিমি রাস্তা পেরোতে এক ঘণ্টা সময় লাগছে।
ধুন্ধুমার পরিস্থিতি পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানায়
পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানায় প্রতিবাদী কৃষকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করল পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় পুলিশ এবং প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে। এমনিতেই পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা এবং দিল্লিতে ঢোকার সমস্ত রকম প্রবেশপথে ব্যারিকেড, কাঁটাতার জড়িয়ে কার্যত দুর্গের চেহারা দেওয়া হয়েছে। যদিও কৃষক সংগঠনগুলো হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছে, তারা মাত্র আধ ঘণ্টার পরে সমস্ত ব্যারিকেড তুলে ফেলবে।
আন্দোলনের ডাক দিল যারা
কৃষকদের দুই টি বড় সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং কিসান মজদুর মোর্চা গত ডিসেম্বরেই দাবি আদায়ে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয়। দু’টি সংগঠনের আওতায় মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের সাড়ে তিনশটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন রয়েছে। তবে ২০২০ সালের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা দুই কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত এবং গুরনাম সিংহ চারুনি মঙ্গলবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেই। তবে মঙ্গলবারের কৃষকদের নেতৃত্বে রয়েছেন অপর দুই বিখ্যাত কৃষক নেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধের এবং জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল।
কেন এই আন্দোলন?
২০২০ সালে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে অবস্থানে বসেছিলেন কৃষকেরা। পরে তিন আইনই বাতিল করা হয়। আর এই আন্দোলনে নামা কৃষকদের দাবি ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মওকুফ করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সরকারের ভয়
২০২০-২১ সালের বছরব্যাপী কৃষকদের আন্দোলনের সময় কয়েক ডজন কৃষক মারা যায়। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার বড় ধরনের চাপে পড়ে। এবার সে ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটা থেকে বিরত থাকতে চায় সরকার। তা ছাড়া এটা নির্বাচনের বছর হওয়ায় প্রশাসন আরও বেশি সতর্ক। তাই দিল্লির উপকণ্ঠে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। দিল্লিকে দুর্গে পরিণত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার