প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪১ এএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৩ পিএম
রাফা অঞ্চলে উদ্বাস্তুদের তাঁবু। ছবি : সংগৃহীত
কারও কথা শুনছে না ইসরায়েল। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে এবার গাজার রাফা অঞ্চলে স্থল অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তার বাহিনী এখন অভিযানের জন্য রাফার দিকে এগোচ্ছে। রমজান মাস শুরুর আগে অভিযান শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। তবে এই অভিযান না চালাতে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব দেশগুলোর নেতারা। তারা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ১৩ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নিয়েছে। এই অভিযান সেখানকার মানবিক বিপর্যয়কে আরও তীব্র করবে।
হামাসের এক নেতা রাফায় সম্ভাব্য অভিযানে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাফায় অভিযান বন্দিবিনিময়ের সম্ভাবনা নস্যাৎ করবে।’ তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা এটি (অভিযান) করতেই যাচ্ছি। সবকিছু পরিকল্পনামতো এগোচ্ছে।’
গাজায় খাদ্যের অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বাসিন্দারা ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে গবাদিপশু ও পাখির খাবার খেতেও বাধ্য হচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চল ঘুরে বিবিসির সাংবাদিকরা এমন করুণ গল্প বলেছেন। গত শনিবার এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। এরও দুই সপ্তাহ আগে সিএনএনের সরেজমিন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ক্ষুধায় দিশেহারা গাজার ফিলিস্তিনিরা ঘাসও খাচ্ছে। ক্রমাগত নির্বিচার বোমায় ফিলিস্তিনিদের গণমৃত্যু হয়েই চলেছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গণহত্যার শিকার হয়েছে ২৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
বিবিসি জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢোকায় কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল। সম্প্রতি কড়াকড়ি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির মানুষদের প্রায় না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু বাঁচার তাগিদে অনেকে পশুখাদ্য পিষে ময়দা করে খাচ্ছে। অন্যদিকে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে না পারায় পশুখাদ্যেও টান পড়েছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলের চরম অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এটা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা বলেছে, যেসব ত্রাণ পাওয়া গেছে গত মাসে তার অর্ধেকের বেশি উত্তর গাজায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কীভাবে এবং কোথায় ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে তাতেও ইসরায়েলের বাহিনী ক্রমেই হস্তক্ষেপ বাড়াচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের প্রায় তিন লাখ ফিলিস্তিনি সহায়তা থেকে বড় রকমের বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লাশের মধ্য থেকে টেনে বের করে ৬ বছরের হিন্দ রজবকে হত্যা
গাজা উপত্যকায় চাচা-চাচি ও চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে একটি গাড়িতে করে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ যাচ্ছিল ৬ বছর বয়সি মেয়ে শিশু হিন্দ রজব। এ সময় তাদের গাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচার হামলা চালায়। তাতে হিন্দ বাদে সবাই নিহত হয়। তাদের মরদেহ ঘটনার ১২ দিন পর গত শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। হামলার সময় হিন্দ রেড ক্রিসেন্টের জরুরি নম্বরে ফোন করে তাকে উদ্ধার করার আকুতি জানায়। হিন্দ ও জরুরি কল অপারেটরের মধ্যকার অডিও কথোপকথনের তথ্য অনুযায়ী, হিন্দ ওই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে গাড়িতে থাকা স্বজনদের লাশের মধ্যে লুকিয়ে ছিল।
গত শনিবার ফিলিস্তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির প্যারামেডিকস সে এলাকায় পৌঁছতে সক্ষম হয়। ওই এলাকায় ব্যাপক যুদ্ধ চলার কারণে সেখানে ঢোকা যাচ্ছিল না। তারা সেখানে যাওয়ার পর হিন্দ যে কালো রঙের কিয়া গাড়িতে ছিল, সেটি দেখতে পান। এটির উইন্ডস্ক্রিন ও ড্যাসবোর্ড টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে ছিল। গাড়ির চারপাশে ছিল গুলির চিহ্ন। স্বজনদের লাশের মধ্যে লুকিয়েও বাঁচতে পারেনি হিন্দ রজব।
গাজায় নিহত ছাড়াল ২৮ হাজার
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গত শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যমতে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ১১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত আরও ১৫২ জন।
৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ২৮ হাজার ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারী ৭০ শতাংশের বেশি। একই সময়ে আহত হয়েছে ৬৭ হাজার ৬১১ জন। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত গাজার ৭০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা প্রায় ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজায় জাতিসংঘ সংস্থার কার্যালয়ের নিচে হামাসের সুড়ঙ্গ পাওয়ার দাবি ইসরায়েলের
গাজায় নতুন করে হামাসের একটি সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। যেটি কয়েশ মিটার দীর্ঘ এবং সেটির কিছু অংশ গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর সদর দপ্তরের নিচে দিয়ে গেছে বলেও দাবি তাদের। তাদের এই দাবির নিরপেক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া হামাসের দাবি, গাজার সুড়ঙ্গগুলো বাসিন্দাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও সামরিক নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়। সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা ও বিবিসি