প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১০:৩৮ এএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১২:২২ পিএম
শি জিনপিং এবং ওলাফ শলৎস। ছবি; সংগৃহীত
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস শুক্রবার (৪ নভেম্বর) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, করোনা মহামারীর পরে এটিই প্রথম কোনো জি৭ নেতার বেইজিং সফর। তবে শলৎসের এই সফর ঘিরে ইউরোপজুড়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেসে শি কে তৃতীয়বারের মতো প্রধান হিসেবে মনোনীত করার ঠিক পরেই শলৎসের বেইজিং সফরের ঘোষণা আসে।
সম্প্রতি চীন প্রসঙ্গে জার্মান সরকারের অভ্যন্তরেও বেশ তিক্ততা শুরু হতে দেখা যায়। চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের হামবুর্গ বন্দরের একটি অংশে উল্লেখযোগ্য শেয়ার কিনে নেওয়ায় এই বিতর্কের দৃঢ় হতে থাকে।
এর বিরোধিতাকারী মন্ত্রীরা বলছেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বেইজিংয়ের প্রভাব বাড়তে পারে। দেশটির নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগও এই বিষয়ে সতর্কতার আহ্বান জানিয়েছে।
সরকারের অভ্যন্তরে সমালোচনা স্বত্তেও জার্মান চ্যান্সেলর চীন প্রসঙ্গে বেশ নরম মনোভাব প্রকাশ করে যাচ্ছেন। তিনি বরাবরই জোর দিয়ে বলেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে ওই চুক্তিতে অগ্রসর হওয়া উচিত। এটিই দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো।
তবে শলৎস ওই চুক্তির বিষয়ে কেন এত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা কেউ নিশ্চিত নয়। তবে তার যুক্তি, চুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের প্রতিনিধিত্ব করছে।
সমালোচকরা বলছেন, আদতে শলৎস শি জিনপিংয়ের জন্য 'উপহার' ছাড়া চীন সফরে যেতে চাইছেন না বলেই ওই চুক্তিতে অগ্রসর হতে যাচ্ছেন। যা একইসঙ্গে সন্দেহ ও উদ্বেগ উভয়ই বাড়াচ্ছে।
চ্যান্সেলর তার এই সফরে ব্যবসায়িক নির্বাহীদের একটি প্রতিনিধিদলকেও সঙ্গে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও তিনি তার পুর্বসূরি অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের 'বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন' নীতি থেকে প্রস্থানেরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে চীন ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া দেশটিতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বাড়াতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
শলৎসের জোট সরকারের অংশীদার গ্রিন পার্টির এক রাজনীতিবিদ ফেলিক্স ব্যানাজসাক বলেন, এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে প্রসারিত ও জোরদার করতে চাই বলে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে সরকারের অবশ্যই জবাবদিহিতা থাকা উচিত।
এর আগেও গ্রিন পার্টি চীনের বিষয়ে বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। কিছুদিন আগেই আবারও সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন পার্টির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। তিনি জনসমক্ষে জানান যে সরকার চীনের কৌশল পুনর্বিন্যাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আগেরবার রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতার ফলাফল থেকে দেশের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
বেয়ারবক বলেন, যেসব দেশ আমাদের মতো একই মূল্যবোধ মেনে চলে না তাদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব আলাদা থাকতে হবে।
তবে ইতোমধ্যে দেশটির অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার চীনের সঙ্গে গড়ে উঠা এই সম্পর্ক শলৎসকে কোথায় দাঁড় করাবে তা নিয়ে এখনো বেশ ইতিবাচক মনোভাবই ধরে রেখেছেন তিনি।
এ ছাড়া আমদানির চাইতে রপ্তানিও বেশি হয় চীনে। জার্মানির দশ লাখেরও বেশি লোকের চাকরি দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে আছে। শুধু দেশটি গাড়ি কোম্পানি ডায়ামলার চীনে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি গাড়ি বিক্রি করে থাকে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই জার্মান ব্যবসায়ীরা আগের চেয়েও বেশি বিনিয়োগ করেছে চীনে। দেশটির রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান বিএএসএফ দক্ষিণ চীনে তাদের একটি অংশ বর্ধিত করেছে। যেখানে এ বছরের শেষ নাগাদ ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওলাফ শলৎসের সফরের প্রাক্কালে জার্মান অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জানান, কাঁচামালের জন্য বেইজিংয়ের ওপর জার্মানির নির্ভরতার একটি অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত ভুল হতে পারে বলে সতর্ক করেন।
২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছরের জন্য চীন জার্মানির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। শলৎস এখন এই সম্পর্কগুলোতে ভারসাম্য বজার রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
চলতি সফরে বেইজিংয়ে ১২ ঘণ্টারও কম সময় কাটাবেন শলৎস। তিনি সফরের আগেই বলেছিলেন, তার এই যাত্রার তার উদ্দেশ্য,যতটা সম্ভব সহযোগিতা খুঁজে বের করা। কারণ, বিশ্বব্যাপী মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বের এখন চীনকে প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যদি চীন পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে চীনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করা উচিত।