× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গুলিবিদ্ধ ইমরান খান, পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ

প্রবা ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২ ২৩:১০ পিএম

ইমরান খানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সংগৃহীত

ইমরান খানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সংগৃহীত

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির প্রধান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল চারটার দিকে পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে গুলিবিদ্ধ হন। তার সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দলটির আরও তিন নেতা। এ ঘটনায় পিটিআইয়ের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে ইমরান খানসহ গুলিবিদ্ধ দলটির অন্য নেতারা শঙ্কামুক্ত। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রধারীকে আটক করেছে পুলিশ। ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। 

পাকিস্তানের দ্য ডনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে পৌঁছে ইমরান খানের লংমার্চ। সেখানকার আল্লাহু চক নামক স্থানে পৌঁছে ভাষণ দেওয়ার কথা ইমরান খানের। একটি পিকআপ ভ্যানে তৈরি করা মঞ্চে ওঠেন ইমরান খান ও দলটির শীর্ষ নেতারা। ভাষণ শুরুর আগ মুহূর্তে এক ব্যক্তি ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইমরান খানসহ ভ্যানে থাকা সবাই বসে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভ্যান থেকে নামিয়ে একটি কালো জিপে তোলার সময় সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন ইমরান খান। 

ঘটনার ঘণ্টখানেকের মধ্যে পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতা রউফ হাসানের বরাতে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই অস্ত্রধারীর একজন ঘটলাস্থলে নিহত হয়েছেন। আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে, গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। 

পরবর্তী সময়ে পুলিশকে দেওয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে অভিযুক্ত অস্ত্রধারী বলেন, ‘ইমরান খান জনগণকে বিভ্রান্ত করছিলেন। আমি এসব সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই আমি তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। শুধু তাকেই, তিনি ছাড়া আর কাউকে নয়। আমার সঙ্গে অন্য কেউ ছিল না।’ আটক ব্যক্তিকে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী মনে হয়েছে। 

পাঞ্জাব পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মোট সাত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছে মুয়াজ্জাম নওয়াজ নামের এক ব্যক্তি। পিটিআইয়ের মুখপাত্র ফুয়াদ চৌধুরী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ইমরান খানসহ পিটিআইয়ের আরও তিন নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন, পিটিআইয়ের নেতা ও পাকিস্তানের পার্লমেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য ফায়সাল, ফায়সাল জাভেদ ও আহমেদ চাট্ট। তাদের সবার অবস্থা স্থিতিশীল।’ নিহত ব্যক্তি পিটিআইয়ের কর্মী বলে দাবি করেছেন ফুয়াদ চৌধুরী। 

ইমরান খানের পায়ের গোড়ালিতে গুলি লেগেছে। শুরুতে বলা হয়েছিল, খানের পায়ে তিন থেকে চারটা গুলি লেগেছে। কিন্তু পিটিআইয়ে নেতা রউফ হাসান আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, ইমরান খানের পায়ে একটি গুলি লেগেছে। ঘটনার পরপরই তাকে পাঞ্জাব থেকে লাহোরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান তার চিকিৎসা চলছে। অন্য গুলিবিদ্ধদেরও প্রত্যকের একটি থেকে দুটি গুলি লেগেছে বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় ইমরান খানকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি। 

ব্যবহৃত অস্ত্র : অভিযুক্ত ব্যক্তি কী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, তা নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় একে-৪৭ ব্যবহার করা হয়েছে। দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যান্ডগান ব্যবহার করা হয়েছে। আর কিছু গণমাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে না বলে শুধু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাঞ্জাব পুলিশও কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা জানাতে পারেনি। 

পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ: ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের প্রায় সব বড় শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডনের প্রতিবেদনে। দেশটির পাঞ্জাব, লাহোর, করাচি, ফায়সালাবাদ, কায়দাবাদ, রাজধানী ইসলামাবাদ, উত্তর নাজিমাবাদসহ দেশটির প্রধান শহরগুলোয় নেমে এসেছে হাজারা হাজার মানুষ। তাদের ইমরান খানের পক্ষে ও সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের সঙ্গে দু-একটি বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ছাড়া এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। 

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা : পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ দেশটির শীর্ষ রাজনীতিবিদরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ ঘটনার তদন্ত চেয়ে দ্রুত প্রতিবেদন চেয়েছেন তারা। 

অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুপ্তহত্যা চেষ্টার আমি তীব্র নিন্দা জানাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমি শিগগির প্রতিবেদন চাই। তিনি ও আরও যারা আহত হয়েছেন, আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এ ঘটনায় পিটিআইয়ের যে এক কর্মী নিহত হয়েছেন, আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।’

নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ লিখেছেন, ‘পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে গুলি করার ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার একটি তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনের জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঞ্জাব সরকারকে সার্বিক সহায়তা দিতেও আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের রাজনীতিতে সংঘাতের কোনো স্থান হবে না। পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান (ইমরান খান) ও আহত অন্য সদস্যদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিও দুই বাক্যে ইমরান খানের হত্যাচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘ইমরান খানের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’

সেনাবাহিনীর নিন্দা : ইমরান খানের হত্যাচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বাহিনীর ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হত্যাচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানায়। তিনিসহ এ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আহতদের সুস্থতা কামনা করছি আমরা। 

রাজনীতিক হত্যার ইতিহাস : পাকিস্তানে রাজনীতিবদিদের হত্যার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদ হত্যার ঘটনা বাদ দিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজরি ভুট্টোর হত্যা বেশ আলোচিত। দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফেরার কয়েক মাসের মাথায় ২০০৭ সালে গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি। দেশটির দুবারের এ প্রধানমন্ত্রী ইসলামাবাদরে পার্শ্ববর্তী শহর রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী র‌্যালির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় গুলি ও বোমা হামলায় তিনি নিহত হন।

এর আগে, বেনজির ভুট্টোর পিতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ১৯৭৯ সালে রাওয়ালপিন্ডির এক সামরিক আদালতে বিচার শেষে ফাঁসি দেওয়া হয়।  

লংমার্চ : গত এপ্রিলে এক অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচুত্য হন ইমরান খান। এরপর থেকে ইমরান খান জনগণকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। গত মে মাসে লাহোর থেকে তিনি তার প্রথম লংমার্চ শুরু করেন। লংমার্চটি রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছার পর পুলিশের লাঠি পেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। 

জুলাইয়ে পাঞ্জাবের স্থানীয় নির্বাচনে জয় পায় ইমরান খানের দল। এতে তার সমর্থকেরা ফের চাঙা হয়ে ওঠেন। এরপর থেকেই দ্বিতীয় লংমার্চের কথা প্রচার করতে থাকেন ইমরান খান ও তার দল পিটিআই। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর রাতে লাহোর থেকে ইসলমাবাদের উদ্দেশ্যে লংমার্চ শুরু করেন ইমরান খান। এতে গণজোয়ার দেখা দেয়। ইসলামাবাদে পৌঁছতে পৌঁছতে খানের লংমার্চে ১০ লাখের বেশি জনসবমগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ১১ নভেম্বর লংমার্চটি ইসলামাবাদের পৌঁছার কথা। 

ইমরান খানের ভাষ্যমতে, এ লংমার্চের মূল উদ্দেশ্যে, ‘ব্যক্তিগত বা দলগত ফায়দা হাসিল নয়। বরং পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। সরকারকে আগাম নির্বাচবনে বাধ্য করা।’ কিন্তু সরকারের তরফে বারবার বল হয়েছে, নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী বছরের অক্টোবরের আগে নির্বাচন দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

প্রবা/রসি





শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা