প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩২ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৫ পিএম
খাবারের জন্য ফিলিস্তিনিদের হাহাকার। ১ ফেব্রুয়ারি রাফা ক্রসিং অঞ্চলে। ছবি : সংগৃহীত
গাজার মিসর সীমান্তের রাফা ক্রসিং অঞ্চলে স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল। ফিলাডেলফি করিডোর হিসেবে পরিচিত এ বাফার জোনে স্থল অভিযান শুরু করলে মিসরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীর ঢল দেখা দিতে পারে। তাই মিসর সেখানে ইসরায়েলের স্থল অভিযানের বিরোধীতা করছে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট বলেন, খান ইউনিসে আমাদের অভিযান সফলভাবে শেষ হতে চলছে। এখন আমরা রাফার দিকে যাব। সেখানে সন্ত্রাসীদের শেষ করতে হবে।
একই দিন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর রেডিওতেও প্রায় একই ধরনের একটি খবর প্রচার করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ফিলাডেলফি করিডোরে অভিযান চালাতে মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের কথা হয়েছে। সেখানে শিগগির অভিযান শুরু করবে ইসরায়েলি সেনারা।
তার আগে ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের অক্সিয়সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ফিলাডেলফি করিডোরে অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে মিসরের গেছেন ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের পরিচালক রোনেন ব্যার। তিনি মিসরের গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান আব্বাস কামেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এ বিষয়ে মিসর সরকার এখনো প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
তবে ইসরায়েলি রেডিওর বৃহস্পতিবারের দাবি অস্বীকার করেছে মিসরের সংবাদ সংস্থা দ্য আল-কাহিরা নিউজ। আল-কাহিরা নিউজকে মিসরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়নি। হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কারণ এটা মিসরের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েল ফিলাডেলফি করিডোর ফের দখলে নিয়ে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক হুমকিতে পড়তে পারে।
ফিলাডেলফি করিডোর কী
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধের পর গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েল। তার আগে গাজা শাসন করত মিসর। এ অবস্থায় ১৯৭৯ সালে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। চুক্তি অংশ হিসেবে ১৯৮২ সালে ফিলাডেলফি করিডোর নামের বাফার জোনটি সৃষ্টি করা হয়।
২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সম্পূর্ণ চলে আসে। তার আগ পর্যন্ত জোনটি নিয়ন্ত্রণ করত ইসরায়েল। তারা চলে আসার পর তার নিয়ন্ত্রণ নেয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও মিসর।
গাজা উত্তর ও পূর্ব দিকে মিসর দ্বারা বেষ্টিত। পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর। তাই দক্ষিণ দিকের এ অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে গাজাকে শাসন না করেও উপত্যকাটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ইসরায়েল। এ কারণ জোনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে এত মরিয়া ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পরিকল্পনা
ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আরও কিছু রাজনীতিবিদ ও সামরিক নেতা মন্তব্য করেছেন। গত ৩০ ডিসেম্বর নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফিলাডেলফি করিডোর আমাদের হাতে থাকবে।’
১৩ জানুয়ারি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে ‘ইসরায়েল প্ল্যানস রিস্কি মিশন টু সিজ লাস্ট গাজা বর্ডার ইট ডাসন্ট কন্ট্রোল’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, ফিলাডেলফি করিডোরে স্থল অভিযান চালাতে চায় ইসরায়েল। বিষয়টি তারা এরই মধ্যে মিশরকে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাদের এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
প্রতিবেদনটির সূত্র ধরে সাংবাদিকেরা নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করেন। জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হ্যাঁ, এ ধরনের একটি সম্ভাবনা আছে। দক্ষিণের জোনটা আমাদের কব্জায় থাকা চাই। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তা না হলে গাজাকে সামরিক শক্তিশূন্য করা যাবে না।’
মিসরের উদ্বেগ
ফিলাডেলফি করিডোর ইসরায়েল ফের নিয়ন্ত্রণে নিলে মিসরের জন্য কয়েক ধরনের সমস্যা হতে পারে।
প্রথমত, লোহিত ও ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত মিসরের সিনাই দ্বীপে বিপুল ফিলিস্তিনি চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ গাজার উত্তর, মধ্য অঞ্চল থেকে প্রায় ২০ লাখ উদ্বাস্তু দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়ে। এসব উদ্বাস্তুদের প্রায় ১০ লাখ অবস্থান করেছে ফিলাডেলফি করিডোরে।
দ্বিতীয়ত, এটা ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যকার শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন।
তৃতীয়ত, সিনাই দ্বীপের ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা মিসরের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করতে পারে। তখন তাকে অন্য ধরনের মাশুল গুনতে হতে পারে।
তাছাড়া হামাস কিংবা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ফিলাডেলফি করিডোর ইসরায়েলের হাতে যাওয়া কোনোভাবে মেনে নেবে না। কারণ এটা ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ।
সূত্র : আলজাজিরা, রয়টার্স, আনাদোলু