জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা নিহত
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:২১ পিএম
জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির অবস্থান। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা। ছবি : সংগৃহীত
জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছোট ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩৪ জন। হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে ইরান।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ওপর ১৫০টির বেশি হামলা হয়েছে। এসব হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক জন সেনা কিছুটা আহত হলেও নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তাই রবিবার সিরিয়া সীমান্তের কাছে ওই ড্রোন হামলায় একসঙ্গে তিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি করেছে। সীমাহীন চাপে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হামলার পর বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির অনেক রাজনীতিবিদ ইরানে সরাসরি হামলা চালানোর দাবি জানিয়েছেন।
রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, দুই মাস আগেই আমি বাইডেনকে ইরানে সরাসরি হামলা চালাতে বলেছিলাম। তখন আমি বলেছিলাম, ইরানে সরাসরি হামলা না চালালে যুদ্ধ সিরিয়া ও ইরাকের বাহিরে ছড়িয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা নিহত হবে।
রিপাবলিকান পার্টির আরও তিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম, টম কটন এবং জন কর্নিনও ইরানে সরাসরি বোমা হামলা চালাতে বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হামলার পর একটি গণমাধ্যমে আলোচনায় তারা এ মত দেন।
গ্রাহাম বলেন, ইরানে এখনই হামলা চালাতে হবে। তাদের ভয়ংকর শিক্ষা দিতে হবে।
টম কটন বলেন, এ হামলার একমাত্র জবাব ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের যেখানেই ইরানি সন্ত্রাসী বাহিনী আছে তাদের ওপর হামলা চালানো।
প্রতিনিধি পরিষদের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগসংশ্লিষ্ট কমিটির রিপাবলিক পার্টির প্রধান মাইক রজার্সও ইরানে সরাসরি হামলা চালানোর দাবি জানিয়েছেন।
হতাহত সেনাদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে জর্ডানের ঘটনাকে বাইডেনের ‘দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণ’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে কখনও এ ধরনের হামলা হতে পারত না। কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে বাইডেন ব্যর্থ। চাপ দিয়েই ইরানকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে হবে।
জর্ডানের ঘটনার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো সদস্য এখন পর্যন্ত ইরানে হামলা চালানোর আহ্বান জানাননি। তবে পার্টির এক সদস্য বাইডেনের ইসরায়েল-হামাস (ফিলিস্তিনি) যুদ্ধের কৌশল নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে। প্রতিনিধি পরিষদের বারবারা লিও নামে ডেমোক্রেটিক পার্টির এ সদস্য ফের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে হামলার পর এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, হামলার বিষয়ে আমরা এখনও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে এ হামলা সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয় ইরানের সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠীগুলোই করেছে, এটা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। যথাসময়ে আমরা প্রতিশোধ নেব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও হামলার জন্য ইরানের সহায়তাপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরাকের ইসলামিক রেসিসট্যান্সকে হামলার জন্য কোনো অর্ডার দেয়নি তেহরান।
রবিবার সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ইরাকের ইসলামিক রেসিসট্যান্স নামের একটি গোষ্ঠী। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত হামলা চলবে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো কিছুতে হামলা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধের কোনো হুমকিই আমাদের দমাতে পারবে না।
নিজেদের সীমান্তে ড্রোন হামলাকে সন্ত্রাসী ঘটনা বলে মন্তব্য করেছে জর্ডান। তারা এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠীকে দায়ী করেনি। তবে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা জানিয়েছে।
তথ্যমতে, জর্ডানের টাওয়ার ২২ নামের ওই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫০ জনের মতো সেনা রয়েছে। ইরাকে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০। সিরিয়ায় রয়েছে অন্তত ৯০০।
বাইডেন কি হামলা চালাবেন
বিরোধীদের চাপে পড়ে বাইডেন কি ইরানে সরাসরি হামলা চালাবেন? এ প্রশ্নটি ঘুরে ফিরে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে কয়েকটি অপশনের কথা ভাবতে পারে বাইডেন প্রশাসন। এক. দায় স্বীকার না করে ইরানের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানো। দুই. ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশে ইরান সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠীদের ওপর বড় ধরনের হামলা চালানো। তিন. ২০২০ সালে কাসেম সোলাইমানিকে ইরাকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করার মতো অভিযানের মাধ্যমে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকাশ্যে বা ঘোষণা দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ইরানে হামলা চালানোর সম্ভাবনা খুব কম। কারণ এমনটি করলে ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য তা বাঁচামরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। তারাও মরণকামড় দেবে। ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধে ঢুকে যাবে। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা নেই।
সূত্র : রয়টার্স, গার্ডিয়ান, আরটি