প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৮:১২ এএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৯ পিএম
বক্তব্য দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। ছবি : প্রবা
রবিবার ব্রাজিলের নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো যে নীরবতা বজায় রেখেছিলেন তা ভেঙে অবশেষে মুখ খুললেন। নীরবতা ভেঙেই তিনি যারা তাকে ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এখনও পরাজয় স্বীকার করেননি বামপন্থি লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে।
বলসোনারোর সংক্ষিপ্ত বিবৃতির পর তার চিফ অব স্টাফ সিরো নোগুইরা বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফলাফল ঘোষণার ৪৪ ঘণ্টা পর বলসোনারো জনসমক্ষে এসে বক্তৃতা দেন।
বলসোনারোর বক্তৃতার পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তাতে বলা হয়, নিজের কথায় বলসোনারো পরাজয়ের কথা স্বীকার না করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুমোদনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনের ফলাফলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ভোটাভুটির আগে প্রেসিডেন্টের নানা দ্বন্দ্বমূলক বিবৃতি তাকে জনসমক্ষে পরাজয় মানতে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই তাকে পদ থেকে সরাতে পারেন।
একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে তিনি ভোটের প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।
অবশেষে নির্বাচনের ফল ঘোষণার ৪৪ ঘণ্টা পর তিনি জনসমক্ষে হাজির হন। এরপর মাত্র ২ মিনিট কথা বলেন। তবে ওই সময় সমবেত সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নেননি তিনি।
তার বক্তৃতায় তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের স্বপ্ন চিরকালের মতো বেঁচে থাকবে।
এ সময় তিনি নিজের এবং তার দলের যে মূল্যবোধ ‘সৃষ্টিকর্তা, পিতৃভূমি, পরিবার ও স্বাধীনতা’ তা পুনর্ব্যক্ত করেন। আর তিনি বলেন, দেশের ‘শৃঙ্খলা ও অগ্রগতি’ রক্ষার জন্য তিনি কাজ করে যাবেন।
তবে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজয়ী লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার নাম উল্লেখ করেননি তার বক্তব্যে।
নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটে জয়ী হন লুলা। আর বলসোনারো পেয়েছিলেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ। ব্রাজিলের আধুনিক ইতিহাসে এত কম ভোটে কোনো প্রার্থীর জয়ী হওয়ার নজির নেই।
কিন্তু বলসোনারোর কট্টর সমর্থকরা এ হার মেনে নিতে পারেননি। তারা ব্রাজিলের দুটি রাজ্য ছাড়া সবকটিতেই রাস্তা অবরোধ করে ফলাফলের প্রতিবাদ জানান।
বলসোনারো এ অবরোধকে বর্তমান জনপ্রিয় আন্দোলন উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ফলাফলে অবিচার ও ক্ষোভের ফল এ আন্দোলন।
তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সব সময় স্বাগত জানানো হবে। তবে বামদের মতো ভূমিতে আক্রমণ, সম্পত্তিতে আঘাত করা কিংবা জনগণের চলাফেরার অধিকারে বাধা দেওয়া যাবে না।
ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান আলেকজান্দ্রে ডি মোরেস মঙ্গলবার রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি’ বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে হিমশিম খাচ্ছে। এখনো ২৫০-এর বেশি জায়গায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবস্থান করছেন।
নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পরই বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে দেন; যে কারণে দেশে খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে, নির্বাচনে লুলার জয়ের পর অনেক নেতা তাকে অভিনন্দন জানান।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচনের পর এ জয় এসেছে।
বলসোনারো প্রখর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী হলেও পরাজয়ের পর থেকে নীরব ছিলেন। অন্যদিকে তার অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্রকে দেখা যায় লুলাকে অভিনন্দন জানাতে; যা তাদের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতাকে আরও প্রবলভাবে প্রকাশ করে।
তবে বলসোনারোর দীর্ঘ নীরবতাকে নির্বাচনী ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার শঙ্কা হিসেবে দেখছিলেন অনেকেই।