প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪৮ পিএম
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৬ পিএম
ইয়েমেনে হামলা চালাতে ছুটছে একটি যুদ্ধবিমান। ১১ জানুয়ারি রাতে লোহিত সাগরের কোনো স্থানে। ছবি : সংগৃহীত
ইয়েমেনে হুতিদের সামরিক স্থাপনায় বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ১৬টি স্থানের ৬০টির বেশি লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়েছে। এতে করে ইরানের সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠীটির রাডার ও অস্ত্রাগার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হুতিরা পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পাল্টা হামলা হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ ধরনের হামলা মোকাবিলার সব প্রস্তুত নিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
অন্যদিকে ইসরায়েল হামলা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটিও সবদিকে নজর রাখছে।
হামলায় অংশ না নিলেও সম্মতি জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ড।
গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা শুরু করে হুতিরা। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত লোহিত সাগরে তারা ৮০টির বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি কার্গো জাহাজে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে তারা।
হুতি হামলা মোকাবিলায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ১০টি দেশ নিয়ে লোহিত সাগরে একটি সামরিক জোট করে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ওপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান’ নামের জোটটি গঠনের পরই হামলা অব্যাহত রেখেছে হুতিরা।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির দাবি, গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। গোষ্ঠীটির আরও দাবি, তারা সব বাণিজ্যিক কার্গো জাহাজে নয়, শুধু ইসরায়েলি মালিকানাধীন জাহাজে হামলা চালাচ্ছে।
এ অবস্থায় লোহিত সাগরে ৯ জানুয়ারি সবচেয়ে বড় পরিসরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হুতিরা। এ দিন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভি ডেস্ট্রয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের রণতরি ও যুদ্ধবিমান হুতিদের ছোড়া ১৮টি ড্রোন ও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। মূলত এ হামলার পরই বৃহস্পতিবার হামলার সিদ্ধান্ত নেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইয়েমেনের রাজধানী সানা, হুদাইদাহ ও ধামার শহরে হুতিদের নিয়ন্ত্রিত লোহিত সাগরের দুটি বন্দর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গোষ্ঠীটির শক্তিশালী ঘাঁটি সাদাতে হামলা চালানো হয়েছে।
হামলায় দুই দেশের যুদ্ধবিমান, যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক রণতরি ও অন্তত একটি ডুবোজাহাজ অংশ নিয়েছে। ছোড়া হয়েছে ১০০ এর বেশি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক টোমাহক করুইসে ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। হামলার পর জো বাইডেন বলেন, ইয়েমেনের হুতিরা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জাহাজপথের নিরাপত্তা ব্যাহত করছিল। তাই আমার নির্দেশে তাদের স্থাপনা লক্ষ্য করে আজকে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি এ হামলায় আমাদের সমর্থন জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্ট্রিন বলেন, জোটের আজকের হামলা হুতিদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বাড়াবাড়ি করলে তাদের আরও মূল্য দিতে হবে।
হামলার আগে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
হামলার পর ওপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ানও একটি বিবৃতি দিয়েছে। গঠনের পরপরই জোটটিতে প্রায় ২০টি দেশ যোগ দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইতালি, ব্রাজিল ও স্পেনসহ অনেক দেশ জোটটি যোগ দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানায়। তাদের শঙ্কা, এ জোট মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে।
সৌদি আরবের উদ্বেগ
ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, লোহিত সাগরে পরিচালিত সামরিক অভিযান নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগে রয়েছে সৌদি আরব। প্রজাতন্ত্রী ইয়েমেনের একাধিক স্থানে বিমান হামলা নিয়ে আমরা সত্যি উৎকণ্ঠিত। আমরা সংযম দেখাতে ও উত্তেজনা কমাতে সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি। লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বজায় রাখা ও স্থিতিশীল থাকা একান্ত জরুরি বলে মনে করে সৌদি আরব।
২০১৫ সালে সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে হুতিরা। এরপর থেকে সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন একটি জোট ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। সৌদি আরবের পক্ষ নিয়ে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রও হুতিদের ঘাঁটিতে সরাসরি বিমান হামলা চালায়। অন্যদিকে হুতিদের সার্বিকভাবে সহায়তা দিতে থাকে ইরান।
৯ বছর পেরিয়ে গেলেও হুতিদের দুর্বল করা যায়নি। উল্টো রাজধানী সানাসহ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মধ্যবর্তী দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেছে হুতিরা।
সম্প্রতি হুতিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। এক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করছে ইরান।
সূত্র : আলমনিটর, আলজাজিরা, বিবিসি