প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০৭ পিএম
হামলার পর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের দৃশ্য। ১৮ ডিসেম্বর তোলা। ছবি : সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১০০ জনের বেশি। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের আবাসিক অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। এতে আল-বুরশ ও আলওয়ান পরিবারের বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে গেছে। একই পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের খুঁজে বের করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
রবিবার দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত এক শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর একটি ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল স্কোয়াডে আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ।
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ১৯ হাজার স্পর্শ করতে চলেছে। এর মধ্যে শিশু ও নারী ৭০ শতাংশের বেশি। একই সময়ে আহত হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার মানুষ।
হতাহত ছাড়া গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এসব ব্যক্তি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ বা ১৮ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির মোট জনসংখ্যা ২৩ থেকে ২৪ লাখ। গাজার ৬৫ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস বা নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে নজিরবিহীন রকেট হামলার পাশাপাশি সীমান্ত বেড়া টপকে ও প্যারাসুটে করে ইসরায়েলে প্রবেশ করে হামাসের কয়েক হাজার যোদ্ধা। তাদের কয়েক ঘণ্টার হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় ৫ হাজার। ধরে নিয়ে আসে ২৪০ জন মতো।
জবাবে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিয়মিত হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী ও দেশটির সেটলাররা। সেখানেও ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ হাজারের বেশি। সেখানে গণগ্রেপ্তারও অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) ভোরে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকারামেও বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটি। এখন পর্যন্ত এসব হামলায় হতাহতের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
২৪ নভেম্বর কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রথমে চার দিনের যুদ্ধবিরতি করে ইসরায়েল ও হামাস। তা পরে দুই দফায় তিন দিন বাড়ানো হয়। সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে হামাস ৮০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়। ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেয়।
হামাসের হাতে প্রায় ২৪০ জনের মতো জিম্মি ছিল। যুদ্ধবিরতিতে ৮০ ইসরায়েলি ও দ্বৈত নাগরিক মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিদেশি জিম্মিকেও মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের হাতে এখনও প্রায় ১০০ ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাসের হাতে থাকা কিছু বন্দি ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে তিন জিম্মি নিহত হয়েছে। এটা নিয়ে শনিবার রাতে তেল আবিবে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বন্দিবিনিময়ের নতুন আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে।
জানা গেছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া শুক্রবার রাতে বৈঠক করেছেন। থানি ও বারনিয়ার বৈঠকের আগে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইউরোপের একটি দেশে বৈঠক করেছেন। বন্দিবিনিময় ও যুদ্ধবিরতি বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা