× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জম্মু-কাশ্মিরের মানুষের যত অধিকার কেড়ে নিল এক রায়

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯ পিএম

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:৪৩ এএম

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের আগে জম্মু ও কাশ্মিরের শ্রীনগরে একটি রাস্তা ধরে ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। ছবি : তৌসিফ মুস্তাফা/এএফপি

সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের আগে জম্মু ও কাশ্মিরের শ্রীনগরে একটি রাস্তা ধরে ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। ছবি : তৌসিফ মুস্তাফা/এএফপি

ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল বৈধ। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এমন রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। স্বায়ত্বশাসনের বিশেষ মর্যাদা হারিয়েছে জম্মু-কাশ্মির। এখন থেকে এটি দুই ভাগকেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখ অঞ্চল। দুই অঞ্চলের দায়িত্ব দুই উপরাজ্যপালের ওপর। তবে আদালতের নির্দেশ– ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন করতে হবে।

ভারতীয় সংবিধানে একটি অস্থায়ী সংস্থান (টেম্পোরারি প্রভিশন) হলো ৩৭০ অনুচ্ছেদ। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে এই ১১ নম্বর অংশে। সংবিধানের বাকি সব ধারা দেশের অন্য রাজ্যগুলোতে প্রযোজ্য হলেও জম্মু ও কাশ্মিরের ক্ষেত্রে হবে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রাজ্যপালের জন্য ছিল সদর-ই-রিয়াসত এবং মুখ্যমন্ত্রীর বদলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশেষ মর্যাদা

২০১৯ সালের আগস্ট মাসের আগ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ ও যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মিরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। জম্মু ও কাশ্মিরে কোনো আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না সংসদের। আইন প্রণয়ন করতে হলে রাজ্যের সম্মতি নিতে হতো। তা ছাড়া আলাদা পতাকাও ছিল জম্মু ও কাশ্মিরের।

এ ছাড়াও ৩৫-এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, রাজ্যের কে স্থায়ী বাসিন্দা, আর কে নয়, তা নির্ধারণ করতে পারত জম্মু ও কাশ্মির বিধানসভা। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ কাশ্মিরি জমি কিনতে পারত না। এমনকি স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ এই রাজ্যে চাকরির আবেদন করতে পারত না। দিতে পারত না ভোটও। রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কোনো নারী বাইরের কাউকে বিয়ে করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো।

মর্যাদা বিলুপ্তির শুরু

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জম্মু-কাশ্মির রাজ্যে বিধানসভার শেষ নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর জম্মু-কাশ্মিরের সেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্র সরকার। জম্মু-কাশ্মির রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখে ভাগ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে একাধিক মামলা দাখিল হয়েছিল। এসব মামলায় ওই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। তাদের বক্তব্য, কাশ্মিরের তৎকালীন রাজা হরি সিংয়ের সঙ্গে ভারত সরকার যে ভারতভুক্তির চুক্তি করেছিল, সেখানেই বিশেষ মর্যাদার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিল।

সরকারপক্ষের যুক্তি ছিল, দেশের সংবিধান সভা জম্মু ও কাশ্মিরকে ৩৭০ অনুচ্ছেদে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন দেশে সংবিধান প্রণয়নের পর ১৯৫৭ সালে সংবিধান সভা ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং তা ছিল অস্থায়ী। ওই অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে ওই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার করে মোদি সরকার। অর্থাৎ নির্দেশনামায় রাষ্ট্রপতি সই করার পরের মুহূর্ত থেকেই রদ হয়ে যায় ৩৭০ ধারা।

বিচারিক প্রক্রিয়া ও রায়

২০২০ সালের মার্চ মাসে জম্মু ও কাশ্মিরের আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ২০২২ সালের মে মাসে জম্মুতে ছয়টি এবং কাশ্মিরে একটি আসন বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

চলতি বছরের ২ জুলাই থেকে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মামলাগুলো এক করে শুনানি শুরু করেন। শুনানি ১৬ দিন চলার পর ৫ সেপ্টেম্বর বেঞ্চ রায় দান স্থগিত রাখেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট মামলার রায় দিয়েছেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক দিক থেকে বৈধ। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট এই রাজ্যের জন্য নির্ধারিত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ করার যে সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি নিয়েছিলেন, তা অসাংবিধানিক নয়। কারণ সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল এক অস্থায়ী ব্যবস্থা। ভারতে অন্তর্ভুক্তির সময়েই জম্মু-কাশ্মির তার সার্বভৌমত্বের অধিকার হারিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এখন থেকে ইতিহাস। যত দ্রুত সম্ভব জম্মু-কাশ্মিরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। কত দ্রুত, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করেননি। তবে রায়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন করতে হবে।

সরকার ও বিরোধীদের মত

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে সামাজিকমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘এই রায় জম্মু, কাশ্মির ও লাদাখে আমাদের ভাই ও বোনদের জন্য আশা, অগ্রগতি ও ঐক্যের একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত আমাদের জাতীয় ঐক্যের মূল ধারণাকে আরও দৃঢ় করেছে; যা প্রত্যেক ভারতীয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের সিদ্ধান্ত শুধু একটি আইনি দলিল নয়, এটি একটি বড় আশার আলোও বটে। এটি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি ধারণ করে, সেই সঙ্গে একটি শক্তিশালী ও অখণ্ড ভারত গড়ার জন্য আমাদের সম্মিলিত সংকল্প।’

সন্ধ্যায় রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মির বিল নিয়ে বিতর্ক সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে যে ৪২ হাজার লোক মারা গেছে। কেন মারা গেছে? বিষয়টা হিন্দু-মুসলিমের নয়। কাশ্মিরের চেয়ে বেশি মুসলিম আছে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও আসামে। কিন্তু কেন সেসব জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দেয়নি? কেন সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দেয়নি? সীমান্তের জন্যও হয়নি। একাধিক এ রকম রাজ্য আছে। রাজস্থানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত আছে। গুজরাটের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত আছে। তাহলে কেন জম্মু ও কাশ্মিরেই সন্ত্রাস ছড়াল? কারণ ৩৭০ ধারা বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিদের শক্তি জোগাত। আর বিচ্ছিন্নতাবাদের কারণে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দেয়।’

বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, জনবিন্যাস কিংবা জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়, রাজনৈতিক কারণেই বিধানসভায় জম্মুর জন্য আসন বাড়িয়ে উপত্যকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বিজেপি। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর সরাসরি একধরনের আঘাত। সংবিধানের সঙ্গেও ধোঁকাবাজি করা হয়েছে এর মাধ্যমে।

কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘আমি হতাশ। তবে আশাহত নই। আমাদের লড়াই জারি থাকবে। বিজেপির এই জায়গায় পৌঁছতে বহু বছর সময় লেগেছে। আমরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’

ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ এই রায়কে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন। তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরের মানুষ এই রায়ে খুশি নয়। তবে আমাদের এটি মেনে নিতে হবে।’

তবে লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানান, বরাবরই তাদের দাবি ছিল কবে জম্মু-কাশ্মিরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর দ্রুত জম্মু-কাশ্মিরকে রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে সেখানে দ্রুত নির্বাচন করানোর ব্যবস্থা করা হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা