প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:০১ পিএম
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:২৯ পিএম
সাইবার নিরাপত্তা আইনের (সিএসএ) প্রতিবাদকারীরা আইনটির অধীনে গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায়। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের সিভিক স্পেস বা মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভেনেজুয়েলার পর্যায়ে নেমে এসেছে। উত্তর আমেরিকার দেশটিতে দীর্ঘ দিন ধরে কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকায় যে অবস্থা হয়েছে, বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন ও নাগরিক সমাজের কণ্ঠরোধ সেই একই পরিণতি হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গভিত্তিক নাগরিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন সিভিকাসের বুধবার (৬ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ মতপ্রকাশ করা হয়েছে। ‘পিপল পাওয়ার আন্ডার অ্যাটাক ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে দেশের সিভিক স্পেসের র্যাঙ্কিং সর্বনিম্ন ক্লোজড বা রুদ্ধতে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সিভিকাসের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, ফের ক্ষমতায় আসতে কোনো কিছুরই পরোয়া করছে না শেখ হাসিনা সরকার। বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে করে বর্তমান সরকারের অধীনে সেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।
সিভিকাস নাগরিক সমাজ, আঞ্চলিক গবেষণা দল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সূচক এবং নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের তথ্যেরভিত্তিতে র্যাঙ্কিং তৈরি করে। চারটি উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যেরভিত্তিতে মোট চারটি ক্যাটাগরি করা হয়। ক্যাটাগরিগুলো হলো উন্মুক্ত, সংকুচিত, বাধাগ্রস্ত, অবদমিত বা রুদ্ধ।
সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্বের ১৯৮ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ২৮টি দেশ ক্লোজড বা রুদ্ধ তকমা পেয়েছে। ফলে চলতি বিদায়ি বছর বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের মতপ্রকাশের দরজা ছিল রুদ্ধ। ২০১৮ সালের পর এটা সর্বোচ্চ। ওই বছর থেকেই সিভিকাস মনিটর এ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
বাংলাদেশ বিষয়ে সিভিকাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সরকার সংবাদিকদেরও নানাভাবে নিপীড়ন করে। সরকারের সমালোচনা করে এমন সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সংস্কার করে সম্প্রতি সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) করা হয়েছে। এটা আগেরটার চেয়ে ভয়ঙ্কর।
সিভিকাসের প্রধান গবেষক মারিয়ানা বেলালবা ব্যারেটো বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশে তাদের সর্বাগ্রে রয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে সক্রিয় কোনো নাগরিক সমাজ নেই বললেই চলে।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন সিভিকাসের গবেষক বেনেডিক্ট। সংস্থাটির এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেরে এ গবেষক বলেন, আন্তর্জাতিক সমাজের এখন বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের পাশে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনের গতিপথ বদলাতে তাদের দাবি জানাতে হবে। বিরোধী নেতাকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তি দিতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই সোচ্চার হতে হবে। সরকারকে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে আহ্বান জানাতে হবে।
সিভিকাসের বুধবারের প্রতিবেদনে চলতি বছর আরও ছয়টা দেশের র্যাঙ্কিং আগের চেয়ে কমেছে। দেশগুলো হলো বসনিয়া ও হারজেগোভিনা (বাধাগ্রস্ত), জার্মানি (সংকুচিত), কিরগিস্তান (অবদমিত), সেনেগাল (অবদমিত), শ্রীলঙ্কা (অবদমিত), ভেনেজুয়েলা (রুদ্ধ)।
সূত্র : সিভিকাস মনিটর ওয়েবসাইট