প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:১৩ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:২৪ পিএম
অবতার সিং খান্দা। ছবি : সংগৃহীত
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ১৮ জুন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন বিখ্যাত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। নিজ্জার নিহত হওয়ার তিন দিন আগে ১৫ জুন ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম শহরের একটি হাসপাতালে আকস্মিকভাবে মারা যান অবতার সিং খান্দা নামের আরেক শিখ অ্যাক্টিভিস্ট। ব্লাড ক্যানসারকে অবতার সিংয়ের মৃত্যুর কারণ বলে দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু গার্ডিয়ানের এক তদন্ত প্রতিবেদনে অবতার সিংয়ের মৃত্যুর সঙ্গে ভারতের পুলিশ সংশ্লিষ্ট বলে পাল্টা দাবি করা হয়েছে।
অবতার সিংয়ের মৃত্যুর পর এক প্রতিবেদনে বার্মিংহামের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের পুলিশ জানায়, অবতার সিংয়ে মৃত্যুর পেছনে সন্দেহজনক কোনো কারণ নেই। মাইলয়েড লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার হঠাৎ তীব্র আকার ধারণ করায় তার মৃত্যু হয়েছে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
কিন্তু গার্ডিয়ানের এক তদন্ত প্রতিবেদনে অন্য জিনিস বের হয়ে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে প্রয়াত অবতার সিংয়ের পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আমলে নেওয়া হয়েছে নানা অভিযোগ। কিন্তু পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে অবতার সিংয়ের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকে অবতার সিংকে মোবাইলে নিয়মিত হুমকি দিয়েছে ভারতের পুলিশ। পাঞ্জাবে তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হয়রানিও করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে এটাও উঠে এসেছে, অবতার সিংয়ের সঙ্গে বিখ্যাত শিখ নেতা অমৃতপাল সিংয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে মনে করত ভারতের পুলিশ। বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অমৃতপালকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ভারতের জেলে রয়েছেন।
অবতার সিংয়ের পরিবারের সদস্যরা ভারতের পুলিশের এ ধরনের সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে অবতার সিংয়ের কঠিন কোনো রোগ ছিল না বলেও দাবি করেছে তারা।
তা ছাড়া অবতার সিংয়ের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে নানা সময়ে পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছিল তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু মিডল্যান্ডস পুলিশ তা করেনি।
এদিকে কানাডায় নিজ্জার হত্যার পর থেকে পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে শিখ নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন অভিযোগ করে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিত শিখ আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল র। এজন্য র-এর কর্মকর্তারা নিখিল গুপ্ত নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে। পান্নুনকে হত্যার বিনিময়ে নিখিলকে দেড় লাখ ডলার দেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) র-এর নীলনকশা ভেদ করে।
দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বিদেশবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’ যুক্তরাষ্ট্রে দুটি কার্যালয় বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সংস্থাটিকে এমনটি আর কখনও করতে হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত গ্রীষ্মের শুরুতে র-এর সান ফ্রান্সিসকো অফিসের প্রধানকে ফিরিয়ে নিতে ভারতের প্রতি অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সময়ে সংস্থাটির লন্ডন কার্যালয়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকেও ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
তারও আগে চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের পর এখনও র-এর ওয়াশিংটন অফিসের নতুন প্রধান নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ র-এর সদ্যসাবেক প্রধান সামন্ত গোয়েল দায়িত্ব ছাড়ার আগেই গত ৩০ জুন ওয়াশিংটন অফিসে নতুন প্রধান নিযুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সে অনুমতি দেয়নি।
সূত্র : গার্ডিয়ান