প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৮ পিএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৬ পিএম
ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরবর্তী দৃশ্য। ২০ নভেম্বর দক্ষিণ গাজার রাফা ক্রসিং এলাকায়। ছবি : এএফপি
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে হামাসের কর্মকর্তারা। হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রয়টার্সকে এ কথা বলেছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ অবস্থায় গাজায় শিগগির যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার।
যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ইসমাইল হানিয়ার এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে রয়টার্সকে জানায়, হামাসের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। আমরা আমাদের চূড়ান্ত অবস্থান মধ্যস্থতাকারী কাতারকে জানিয়েছি।
পাশাপাশি সময়ে হামাসের আরেক কর্মকর্তা ইসাত এল রেশিক আল-জাজিরাকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির সময়সীমা, গাজার সর্বত্র ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া এবং কারাবন্দি বিনিময়কে ঘিরেই মূলত আলোচনা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।
হামাসের এ কর্মকর্তা আরও জানান, যুদ্ধবন্দি মুক্তির আওতায় নারী ও শিশু থাকবে। চুক্তির বিস্তারিত বিষয় ঘোষণা করবে কাতার।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) ওয়াশিংটন পোস্ট সর্বপ্রথম যুদ্ধবিরতির কথা প্রকাশ করে। এরপর থেকে এ বিষয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
হামাস ও গাজার আরেকটি সংগঠন ইসলামিক জিহাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, তারা ৫০ থেকে ১০০ জিম্মিকে মুক্ত করে দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল অন্তত ৩০০ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেবে। বন্দি বিনিময়ে নারী ও শিশু থাকবে। থাকবে না কোনো সেনা। আর গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে জিম্মিদের মধ্য থেকে ইসরায়েলিদের পাশাপাশি বিদেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কোনো কোনো দেশের নাগরিকও থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হামাসের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, চুক্তির বিষয়ে আমরা আগের চেয়ে অনেক দূর এগিয়েছি।
একই দিন বাইডেন বলেন, হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি।
শনিবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের পরের দিন রবিবার (১৯ নভেম্বর) কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানি জানান, যুদ্ধবিরতির জন্য টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা ছাড়া তেমন কোনো ঝামেলা নেই। এসব ঝামেলাও অতি সামান্য।
একই দিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত মাইকেল হেরৎসগ এবিসি নিউজকে বলেন, দুয়েক দিনের মধ্যেই চুক্তি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তবে ইসরায়েল-হামসের চুক্তি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উপনিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফাইনার এনবিসি নিউজকে বলেন, এ ধরনের স্পর্শকাতর চুক্তি শেষ মুহূর্তেও পণ্ড হয়ে যেতে পারে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে হামাস। একই সঙ্গে সীমান্ত বেড়া ভেঙে ও প্যারাসুটে করে ইসরায়েলে প্রবেশ করে হামাসের প্রায় ২ হাজার যোদ্ধা। তারা সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে। ধরে নিয়ে আসে ২৪০ জন। জিম্মিদের মুক্ত করতে ইসরায়েলে টানা বিক্ষোভ হচ্ছে। এতে চাপে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৫ হাজার ৬০০-এর বেশি। নারী অন্তত ৩ হাজার ৫৫০। একই সময়ে আহত হয়েছে ৩১ হাজারের বেশি। স্থানচ্যুত হয়েছে ১৬ লাখের বেশি, যা গাজার মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ সোমবার (২০ নভেম্বর) এসব তথ্য জানিয়েছে।
তথ্যমতে, গাজায় আহত ও নিহতের পাশাপাশি এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এর বেশিরভাগই বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অবস্থায় আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সোমবার গাজার প্রশাসনিক কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ইসরায়েলি বিমান ও স্থল বাহিনীর অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ৮৩টি মসজিদ, ৩টি গির্জা এবং ৪৩ হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার বাড়িঘর।
৪৬ দিনের ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকাটির ৬০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় যুদ্ধপরবর্তী সময়ে গাজার পুনর্গঠন কীভাবে হবে, তা কেউ ভাবতে পারছে না।