× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গাজায় হাত দিয়ে কবর খুঁড়ে লাশ দাফন

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৮ পিএম

শুক্রবার গাজা রাফা এলাকায় বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এক বাবা তার রক্তাক্ত সন্তানকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত

শুক্রবার গাজা রাফা এলাকায় বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এক বাবা তার রক্তাক্ত সন্তানকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েলের গণবোমায় গাজায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের কবর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি সব জায়গায় নেই। বিশেষ করে উত্তর গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে লাশ দাফনের সরঞ্জাম যেমন নেই, তেমনি করব খোঁড়ার মানুষ সেভাবে নেই। কারণ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী লোকালয়েও কোথাও নড়াচড়া লক্ষ করলেই গুলি ছুড়ছে। একই কারণে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া ফিলিস্তিনিদের উদ্ধারেরও সুযোগ নেই। গাজার অধিকাংশ মানুষ এখন ছোটাছুটির মধ্যে রয়েছে। গুলি ও বোমা থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করছে তারা। 

বিশ্বজুড়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি উঠলেও ইসরায়েল কারও কথা শুনছে না। গতকাল শুক্রবার আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তের প্রস্তাব তোলা হয়েছে। আইরিশ সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ইসরায়েল কোনো আইন মানে না। তারা ফিলিস্তিনের ওপর নির্বিচার হত্যা অভিযান চালাচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চললেও কখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার হয়নি। 

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, গাজার সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির জাবালিয়া ক্যাম্পে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছে অন্তত ১৮ জন। আহত হয়েছে অনেকে। সেখানে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া ফিলিস্তিনিদের উদ্ধারে হাত দিয়ে ইট-পাথর সরাতে হচ্ছে। কবরও খুঁড়তে হচ্ছে হাত দিয়ে।

আল-শিফা হাসপাতাল থেকে লাশের পচা দুর্গন্ধ ছড়ালেও ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছে। সেখান থেকে লাশ বের করার কোনো উপায় নেই। আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, ভেতরে ৭ হাজারের মতো মানুষ রয়েছে। যাদের মধ্যে রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীরাও রয়েছে। সেখানে বিনা চিকিৎসায় ও ক্ষুধায় মানুষ মারা যাচ্ছে।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, গাজায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত গাজায় ১১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ, যারা আর বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

এ অবস্থায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে। এরই মধ্যে গাজায় সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। এখন বেরিয়ে আসছে আরও ভয়ংকর তথ্য। তা ছাড়া ইসরায়েলের প্রতিটি যুদ্ধে পরীক্ষিত অস্ত্রের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়েছে। বর্তমান গাজা যুদ্ধ তার অস্ত্র শিল্পের সর্বশেষ পরীক্ষাগার।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ম্যাগলান কমান্ডো ইউনিট ২২ অক্টোবর গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে আয়রন স্টিং নামে একটি নতুন ১২০ মিলিমিটার মর্টার বোমা হামলা করে, যার ফুটেজও তারা প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছে। তৎকালীন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বর্তমানে যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেছিলেন, আয়রন স্টিংকে ‘উন্মুক্ত ভূখণ্ড এবং শহুরে পরিবেশ’ উভয় ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বন্ধের জন্য ‘জরুরি’ পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী বেনি গান্টজের সঙ্গে এক ফোনালাপে এ আহ্বান জানান তিনি।

বেনি গান্টজ হলেন ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদে তিনি যোগ দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, গান্টজের সঙ্গে ফোনালাপে ব্লিঙ্কেন পশ্চিম তীরে উত্তেজনা কমাতে জরুরি ভিত্তিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান চরম সহিংস কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ বাড়ানো এবং তা ত্বরান্বিত করা, হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি নিশ্চিত করা এবং এ সংঘাত যেন বড় আকার ধারণ না করে, তা নিশ্চিতের প্রচেষ্টা নিয়েও ব্লিঙ্কেন কথা বলেছেন।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক সংস্থার (ওসিএইচএ) তথ্যানুযায়ী, ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা উল্লেখজনক হারে বেড়ে গেছে। ৭ অক্টোবরের আগে দিনে গড়ে তিনটি সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এখন তা বেড়ে দিনে সাতটি হয়েছে।

দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী যখন নতুন করে অভিযান চালাচ্ছে, গাজার বড় হাসপাতালগুলো ও এর আশপাশে সামরিক কার্যক্রম চালাচ্ছে, তখনই ব্লিঙ্কেন এমন মন্তব্য করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। সেখানকার শরণার্থী শিবিরের কাছে তারা স্নাইপার এবং ৮০টির বেশি সামরিক ও বুলডোজার মোতায়েন করেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। যদিও শুরুতে এ সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ দাবি করেছিল দেশটি। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে বলে ইসরায়েল দাবি করে আসছে।

হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। নির্বিচার ও বিরামহীন হামলায় গাজায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, চলমান যুদ্ধের কারণে গাজার ৩৬টি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি হাসপাতাল অচল হয়ে গেছে। সূত্র : আলজাজিরা

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা