প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০২ পিএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২৪ পিএম
গাজায় অভিযানে ইসরায়েলি ট্যাংক। ১৪ নভেম্বর ইসরায়েল সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা। ছবি : সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার বৃহত্তম হাসপাতাল আশ-শিফাকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলের ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান। হাসপাতালটির কার্যক্রম দুই দিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে প্রতিদিন রোগী মারা যাচ্ছে। তাদের দাফন করা যাচ্ছে না। ফলে বের হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। পশু-পাখি মরদেহ ছিঁড়ে খাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় হাসপাতালটির আশপাশের এলাকায় হামাস যোদ্ধা ও ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে চলছে তীব্র যুদ্ধ।
আশ-শিফা হাসপাতালে রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আশ্রিত উদ্বাস্তু মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আটকা পড়েছে বলে দাবি করেছে হামাস।
সোমবার হামাসের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু রিশ বলেছেন, আশ-শিফায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ আটকা পড়েছে। আবু রিশ নিজেও ওই হাসপাতালে আটকা পড়েছেন।
কিন্তু আশ-শিফায় আটকা পড়ার সংখ্যা কয়েক শত বলে দাবি করেছে ইসরায়েল ।
তবে জাতিসংঘের অনুমান, আশ-শিফায় রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও উদ্বাস্তুসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আটকা পড়েছে।
ইসরায়েলের দাবি
ইসরায়েলের দাবি আশ-শিফায় হামাসের একটি কমান্ডো সেন্টার রয়েছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র পিটার লার্নার বলেন, আশ-শিফা হামাসের সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অন্যতম কেন্দ্র। আমাদের সেনারা হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে। আমরা যতটা সম্ভব আটকা পড়া সাধারণ মানুষকে সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করছি।
তার আগে রবিবার (১২ নভেম্বর) ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগসহ দেশটির শীর্ষ রাজনীতিবিদদের দাবি, আশ-শিফার মাটির নিচে হামাসের সুড়ঙ্গ রয়েছে। হামাসের সেনারা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। হামাস এ দাবি অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলের দাবি অস্বীকার
হামাস ও আশ-শিফার সার্জারি বিভাগের প্রধান ড. মারওয়ান আবু সাদা ইসরায়েলের দাবি অস্বীকার করেছেন। ১২ নভেম্বর বিবিসিকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে আবু সাদা বলেছেন, আমাদের হাসপাতালে একজনও হামাসের যোদ্ধা নেই। পুরো হাসপাতাল তদন্ত করে দেখার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মহলকে স্বাগত জানাই।
বাইডেনের আহ্বান
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় দৈনিক শত শত মানুষ নিহত হলেও দেশটির পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধের কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করায় কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় হাসপাতালে সাবধানে অভিযান চালাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সোমবার এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, হাসপাতালগুলো রক্ষা করতে হবে। হাসপাতালে কম আগ্রাসীভাবে অভিযান চালাতে হবে।
হতাহত
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। পাশাপাশি প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিকসহ চার নারী জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
জবাবে গাজায় নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, গোলা ও ড্রোন হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলা সোমবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত ৩৯ দিনে গাজায় ১১ হাজার ২০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু ৪ হাজার ৫০০ এর বেশি। নারী ৩ হাজার ৫০০ এর বেশি।
গাজায় নিখোঁজ রয়েছে আরও প্রায় আড়াই হাজার। নিখোঁজদের মধ্যে শিশু প্রায় দেড় হাজার।
ফিলিস্তিনের আরেক অংশ ও ইসরায়েলের হাতে ১৯৬৭ সাল থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু প্রায় ৫০। এখানে প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেক পরিবারকে তাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তা দখল করেছে ইসরায়েলি সেটেলারেরা।
অন্যদিকে গাজায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জ্বালানির অভাবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজার সব হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে বলে সোমবার (১৩ নভেম্বর) হুঁশিয়ারি দিয়েছে উপত্যকাটির স্বাস্থ্যবিভাগ।
সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, আল-মনিটর