প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১২:২৩ পিএম
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:০৪ পিএম
ইসরায়েলি হামলায় এভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েল গাজায় পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে ৭০ নারী ও শিশু জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। সোমবার (১৩ নভেম্বর) হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসিম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু ওবাইয়দা এক অডিও বার্তায় এ কথা জানিয়েছেন।
নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করা ওই অডিও বার্তায় আবু ওবায়দা বলেন, শক্রপক্ষের জিম্মি নারী ও শিশুদের মুক্ত করার জন্য গত সপ্তাহে কাতার আমাদের একটা প্রস্তাব দিয়েছে। বিনিময়ে ২০০ ফিলিস্তিনি শিশু ও ৭৫ নারীকে মুক্তি দিতে চেয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু আমরা যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে শক্রপক্ষের নারী ও শিশুদের মুক্তি দিতে চাই। এ জন্য ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। বিরতি চলাকালে গাজার সর্বত্র ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েল হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। পাশাপাশি প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুই নাগরিকসহ চার নারী জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
জবাবে গাজায় নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, গোলা ও ড্রোন হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলা সোমবার (১৩ নভেম্বর) পর্যন্ত ৩৯ দিনে গাজায় ১১ হাজার ২০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু ৪ হাজার ৫০০ এর বেশি। নারী ৩ হাজার ৫০০ এর বেশি।
গাজায় নিখোঁজ রয়েছে আরও প্রায় আড়াই হাজার। নিখোঁজদের মধ্যে শিশু প্রায় দেড় হাজার।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের আরেক অংশ ও ইসরায়েলের হাতে ১৯৬৭ সাল থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিশু প্রায় ৫০। এখানে প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেক পরিবারকে তাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তা দখল করেছে ইসরায়েলি সেটেলারেরা।
অন্যদিকে গাজায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। উপত্যকাটির বড় দুটি হাসপাতাল আশ-শিফা ও আল-কুদসে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। এসব হাসপাতালে ইসরায়েল একাধিকবার বোমা হামলা করেছে।
গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আশ-শিফার কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে দুই দিন আগে। সোমবার থেকে হাসপাতালটির গেটে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান। হাসপাতালটি প্রায় কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানে মরদেহ পচছে, পশুতে খাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও সোমবার (১৩ নভেম্বর) এসব ভয়ঙ্কর খবর দিয়েছে।
হাসপাতালের ম্যানেজার বলেছেন, আশপাশের মৃতদেহ এখন কুকুরে খাচ্ছে। ইসরাইলের স্নাইপাররা কাউকে বাইরে দেখলেই গুলি ছুড়ছে। ফলে মৃতদেহ দাফন করতে পারছে না হাসপাতালগুলো। চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আশ-শিফা হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি নেই। এ জন্য অপরিণত নবজাতকদের ইউকিউবেটর থেকে বের করে আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এমন অবস্থায় এই হাসপাতাল প্রায় কবররস্থানে পরিণত হয়েছে বলে সতর্কতা দিয়েছে ডব্লিউএইচও।
কয়েক দিনে এই হাসপাতালের চারদিকে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। এই হাসপাতালে ইসরায়েল সরাসরি বোমা হামলা করেছে। হামলায় হাসপাতালটির হৃদরোগ বিভাগ ধ্বংস হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগসহ দেশটির শীর্ষ রাজনীতিবিদদের দাবি, আশ-শিফার মাটির নিচে হামাসের সুড়ঙ্গ রয়েছে। হামাসের সেনারা সেখানে অবস্থান নিয়েছে। হামাস এ দাবি অস্বীকার করেছে।
আশ-শিফার সার্জারি বিভাগের প্রধান ড. মারওয়ান আবু সাদাও ১২ নভেম্বর বিবিসিকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের দাবি অস্বীকার করেছে। তিনি বলেছেন, আমাদের হাসপাতালে একজনও হামাসের যোদ্ধা নেই। পুরো হাসপাতাল তদন্ত করে দেখার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মহলকে স্বাগত জানাই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হাসপাতালগুলো সুরক্ষিত থাকতে হবে। বাইডেনের আশা সাবধানে হাসপাতালে অভিযান চালানো হবে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা হাসপাতাল থেকে রোগীদের বের করে দিচ্ছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে আশ-শিফায় কমান্ডো অভিযান শুরু করবে ইসরায়েল। অথচ সেখানে এখনও প্রায় সাড়ে ৬০০ রোগী, প্রায় ৫০০ চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্মী এবং ১ হাজার ৫০০ মতো উদ্বাস্তু মানুষ রয়েছে। কমান্ডো অভিযান শুরু হলে বড় ধরনের প্রাণহানি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি, ওয়াফা