প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২১ পিএম
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৪ পিএম
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত ক্রসিংয়ে শরণার্থী বোঝায় ট্রাকের ভিড়। ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ শরণার্থী আফগানিস্তানে ফিরতে শুরু করেছে। এসব শরণার্থীদের অনেকে প্রায় চার দশক আগে সোভিয়েত রাশিয়ার আফগানিস্তান হামলার সময় পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। পাকিস্তানকেই নিজেদের দেশ ও ঘর বানিয়েছিল। অনেকের সন্তানের জন্ম, বিয়ে ও নাতি-নাতনিই বেড়ে ওঠেছে পাকিস্তানের গ্রামে গ্রামে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের এক সংক্ষিপ্ত নোটিসে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে এসব শরণার্থীদের ফিরতে হচ্ছে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে।
গত মাসের শুরুতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অবৈধ ১৭ হাজার আফগান শরণার্থীকে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসলামাবাদ। এটা নিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে ও বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু ইসলামাবদ নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
ঘোষণার পর থেকে গত এক মাসে তোরখাম ও চমন সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি আফগান শরণার্থী পাকিস্তান ছেড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে গত দুই মাসে প্রায় ২ লাখ আফগান শরণার্থী পাকিস্তান ছেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আবদুল্লাহর কপাল
জানা যায়, পাকিস্তানে প্রায় ৪০ লাখ বিদেশি শরণার্থী থাকে। এসব শরণার্থীর অধিকাংশই প্রতিবেশী আফগানিস্তানের। এদের মধ্য থেকে নথিপত্র নেই এমন ১৭ লাখকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, দাবি পাকিস্তানের।
কিন্তু যারা ফেরত আসছে তাদের অনেকের কাছে আফগানিস্তানের নাগরিকত্বের প্রমাণ ও পাাকিস্তানের শরণার্থীর কার্ড রয়েছে বলে জানা গেছে। এ রকম একজন আবদুল্লাহ।
১৯৭৯ সালে রুশ হামলার পর গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন আবদুল্লাহ। নানা জায়গা ঘুরে পাঞ্জাবে থিতু হন তিনি। সেখানে মাটির ঘর তৈরি করেছেন। কাজ করেন ইটভাঁটায়।
বৃদ্ধ আবদুল্লাহ প্রায় ৪০ বছরের মায়া ত্যাগ করে পরিবারের ২২ সদস্যকে নিয়ে আফগানিস্তানে ফিরতে একটি ট্রাক ভাড়া করেছেন। আবদুল্লাহ ও তার স্ত্রী ছাড়া তার পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাকিস্তানে। নিজেদের মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেদের বিয়ে করিয়েছেন পাকিস্তানেই। এখন নাতি-নাতনিসহ বৃদ্ধ আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানে ফিরতে হচ্ছে।
আবদুল্লাহ বিবিসিকে বলেন, এটা কখনও ভাবিনি। আফগানিস্তানে কাজের অভাব। পরিবারের এত সদস্য নিয়ে কী করব বুঝতেছি না।
পাকিস্তানে আফগানিস্তানের পুরোনো শরণার্থীদের পাশাপাশি তুলনামূলক নতুন শরণার্থীও রয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান দ্বিতীয়বার ক্ষমতাগ্রহণের পর ৬ থেকে ৮ লাখ আফনাগ শরণার্থী পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। এ সিদ্ধান্ত বাতিলেরও আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরও পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কিন্তু এ সংস্থাগুলো পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেনি।
বুধবার (১ নভেম্বর) পাকিস্তানকে নিজ নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করতে অনুরোধ জানায় আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত এতে পাকিস্তান সাড়া দেয়নি।
সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা