নিজ্জার হত্যা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২০ পিএম
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৭ পিএম
হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ২৪ জুন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ভারতের কনস্যুলেটের সামনে। ছবি : সংগৃহীত
খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যাকারীদের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে কানাডার হাতে। নজরদারি ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা সূত্রে তারা এসব প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। কানাডাকে একটি মিত্র দেশও এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে।
বৃহস্পতিবার কানাডার সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। মিত্র কোন দেশ কানাডাকে নিজ্জার হত্যার তথ্য বা প্রমাণ সরবরাহ করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে দেশটি ‘ফাইভ আইসের’ সদস্য। ফাইভ আইস বলতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডার গোয়েন্দা বিভাগকে বোঝায়।
নিজ্জার ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার একটি গুরুদুয়ারার বাইরে দুই অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন। নিজেদের মাটিতে নিজেদের নাগরিক হত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয় কানাডা। তা নিয়ে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা নিবিড় তদন্ত শুরু করে।
কানাডার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হরদীপ হত্যার তদন্তে পর্দার অন্তরালে ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকবার ভারতের সহায়তা চেয়েছে। দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিকবার ভারতও সফর করেছেন।
আগস্টের মাঝামাঝি কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা উপদেষ্টা জোডি টমাস ভারত সফর করেন। চার দিনের সফরে তিনি ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তীতে চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ফের ৫ দিনের জন্য দিল্লি সফর করেন। ওই সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও নয়াদিল্লিতে ছিলেন।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দেশটির পার্লামেন্টে দাবি করেন, হরদীপ সিংয়ের হত্যার সঙ্গে ভারতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ভারতীয় এজেন্টরাই তাকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে আমাদের হাতে ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে। কানাডার মাটিতে এর নাগরিককে হত্যা আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত। এর মধ্য দিয়ে ভারত মুক্ত, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন করেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ভারত কানাডার এ দাবি সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে। দিল্লির দাবি, অটোয়ার এ দাবি ‘অযৌক্তিক’ ও ‘উদ্দশ্যপ্রণোদিত’।
এরপর দুই দেশই পাল্টা-পাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে। উভয় দেশ কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করেছে।
বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোও জড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া হরদীপ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা কানাডার তদন্তে ভারতকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাদের বৈঠকের পর কানাডায় ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম স্থগিতের নোটিস এলো।
এদিকে কানাডায় স্থানীয় সময় বুধবার খালিস্তানপন্থি আরেক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত যুবকের নাম সুখদুল সিং। যিনি সুখা দুনেকে নামে বেশি পরিচিত।
বুধবার কানাডার উইনিপেগে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। দুনেকে কানাডার খালিস্তান আন্দোলনের বড় কণ্ঠস্বর।
হরদীপ কে
হরদীপ সিং ভারতে শিখদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বর। ৪৫ বছর বয়সি হরদীপের জন্ম ভারতের পাঞ্জাবে। ১৯৯০-এর দশকে যুবক বয়সে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি।
হরদীপ খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান। এটাকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে ভারত। হরদীপের হত্যাকারীদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তিনি ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন।
১৮ জুন ভ্যাঙ্কুভারের সুরে শহরে মুখোশধারী দুই ব্যক্তি হরদীপকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।