নাগোরনো-কারাবাখে যুদ্ধবিরতি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৯ পিএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০২ পিএম
আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সামনে প্রতিবাদ। ছবি : সংগৃহীত
আজারবাইজানের সঙ্গে বুধবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে নাগোরনো-কারাবাখ। ঘোষণা অনুযায়ী নাগোরনো-কারাবাখের সশস্ত্র বাহিনীগুলো নিরস্ত্র করা হবে এবং ভেঙে দেওয়া হবে। বুধবারের এ ঘোষণার পর থেকে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনে প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নাগোরনো-কারাবাখে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান শুরু করে আজারবাইজান। বুধবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে অন্তত ২৭ জন নিহত ও আরও প্রায় ২০০ জন আহত হন। তবে কারাবাখের কর্তৃপক্ষের দাবি, আজারবাইজানের হামলায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ।
হামলা শুরুর ২৪ ঘণ্টার মাথায় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বুধবার (স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে) অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয় নাগোরনো-কারাবাখ কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, আজারবাইজানের নির্বিচার হামলায় আত্মসমর্পণ বা যুদ্ধবিরতি না করে তাদের কোনো উপায় ছিল না।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা বলছেন, না, যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া কোনোমতেই ঠিক হয়নি। সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ছিল। এখন আত্মসমর্পণ করায় নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের আরও নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। পাশিনিয়ানের দুর্বল চিত্তের কারণে তাদের এ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। এতে তাদের তিন দশকের প্রতিরোধ জলে মিশে যাচ্ছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩২ বছর বয়সি সৌর প্রকৌশলী হারুত বলছেন, ‘আমরা আশা করি তিনি (নিকোল পাশিনিয়ান) পদত্যাগ করবেন। যুদ্ধে হেরে যাওয়া একজন নেতার পক্ষে পদে থাকার এবং দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে চলে যাওয়া ভালো।’
তিনি বলেন, আর্মেনীয়রা কারাবাখের জন্য কতদিন ধরে লড়াই করেছিল তা বিবেচনা করলে এ পরাজয়টি আরও বেদনাদায়ক আমাদের কাছে। তার ভাষায়, ‘আমরা ৩০ বছর ধরে এটার জন্য লড়াই করছি, মূলত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। এবং এখন এটি আর আমাদের নয়।’
বিরোধী রাজনীতিবিদরাও পাশিনিয়ানের নিন্দা জানিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। এ ছাড়া রিপাবলিক স্কোয়ারে কয়েকজন বিক্ষোভকারী ‘নিকোল বিশ্বাসঘাতক!’ বলেও স্লোগান দেন।
পাশিনিয়ান ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন। এরপর নাগোরনো-কারাবাখ ছিটমহলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০২০ সালে আজারবাইজানের সঙ্গে সর্বশেষ বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ায় আর্মেনিয়া। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ৬ হাজার সেনা প্রাণ হারায়।
২০২০ সালের যুদ্ধে আর্মেনিয়ার পরাজয় ঘটে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সে যুদ্ধ শেষ হয়। আর্মেনীয়দের পরাজয়ের পর নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক শক্তি নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকার করে নিয়েছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েভ রাশিয়া বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্য অনেক স্বাধীন দেশের মতো আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের জন্ম হয়। গহিন আরণ্যের নাগোরনো-কারাবাখ ছিটমহল দুটি আজারবাইজানের অংশে পড়ে।
কিন্তু নাগোরনো-কারাবাখে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত। তারা নিজেদের আর্মেনিয়ার নাগরিক মনে করে। এ অবস্থায় ১৯৯৪ সালে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে আর্মেনিয়া নাগোরনো-কারাবাখ দখলে নেয়। ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত তা তাদের দখলে ছিল।
বুধবার ফেসবুকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে নাগোরনো-কারাবাখের ইনফোসেন্টার জানায়, ‘আমাদের সেনারা আজারবাইজানের বড় ধরনের আগ্রাসন ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শত্রুরা আমাদের সেনাদের পজিশনে ঢুকে পড়ে। তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।’
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কারাবাখের আর্মেনিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আজারবাইজানের ইয়েভলাখ শহরে বৈঠক হবে। শহরটি কারাবাখের আঞ্চলিক রাজধানী খানকেন্দি থেকে ৬০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। বৈঠকে নাগোরনো-কারাবাখকে আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে ফের আলোচনা হবে।
সূত্র : আলজাজিরা, আরটি, বিবিসি