প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৫৮ পিএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৫৯ পিএম
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার একটি গুরুদুয়ারায় হরদীপ সিং নিজ্জারের একটি পোস্টার। ১৯ সেপ্টেম্বর। ছবি : সংগৃহীত
কানাডা সোমবার দাবি করেছে, হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দাদের হাত রয়েছে। নয়াদিল্লি এমন দাবির তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং তা ভারত বিরোধী মানসিকতার প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছে। কিন্তু কানাডার অভিযোগ আমলে নিয়ে হরদীপ হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। এই তিন দেশের সঙ্গে কানাডা ও ভারত উভয়ের বড় ধরনের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, হরদীপ সিং হত্যার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে, এ ধরনের অভিযোগ বেশ গুরুতর। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। আমরা চাই, এটার পূর্ণাঙ্গ ও খোলামেলা তদন্ত হোক। ভারতের প্রতি আমাদের আহ্বান, হরদীপ হত্যার তদন্তে কানাডাকে সার্বিকভাবে সহায়তা করুন।
একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের এক কর্মকর্তাও রয়টার্সকে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (টুইটার) এক পোস্টে বলেছেন, হরদীপ হত্যার সঙ্গে ভারতের কর্মকর্তারা জড়িত কিনা, তা কানাডাকে স্পষ্ট করতে হবে। সব দেশকে অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও আইনের শাসন মেনে চলতে হবে। দিল্লির বিরুদ্ধে অটোয়া যে অভিযোগ করেছে তা ভয়াবহ। আমারা এ বিষয়ে কানাডার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, হরদীপ হত্যায় ভারত জড়িত থাকার অভিযোগটি বেশ স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে আমরা যারপরনাই উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
হরদীপ কে
হরদীপ সিং নিজ্জার ভারতে শিখদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বর। ৪৫ বয়সি হরদীপের জন্ম ভারতের পাঞ্জবে। ১৯৯০ এর দশকে যুবক বয়সে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। ২০১৫ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান।
হরদীপ খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান। এটাকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে ভারত। হরদীপের হত্যাকারীদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তিনি ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন।
১৮ জুন ভ্যাঙ্কুভারের সুরে শহরে মুখোশধারী দুই ব্যক্তি হরদীপকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
কানাডার অভিযোগ
১৮ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ জড়িত। এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে।
এই অভিযোগের পর ওই দিন ভারতের এক কূটনীতিককে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় কানাডা। জবাবে ভারতও কানাডার এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।
তবে মঙ্গলবার ট্রুডো বলেছেন, ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলতে আমরা এমন অভিযোগ করিনি। আমাদের মাটিতে কানাডার নাগরিককে হত্যা আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। আমরা এ বিষয়ে নয়াদিল্লিকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে ট্রুডো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও অন্য মিত্র দেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন কানাডার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তাছাড়া যথাসময়ে হরদীপ হত্যার সঙ্গে ভারতের জড়িত থাকার বিষয়েও প্রমাণ প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
ভারতে জবাব
হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে অস্বীকার করেছে ভারত। তাছাড়া কানাডার এ ধরনের ভারতবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে দিল্লি।
ভারতের অভিযোগ, কানাডায় শিখদের অন্তত নয়টি সংগঠন রয়েছে, যারা ভারতবিরোধী তৎপরতা চালায়। কানাডা তাদের সহায়তা দেয়। এসব সংগঠন নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের কিছু নেতাকে বারবার ফেরত দিতে অনুরোধ করেও কোনো সাড়া পায়নি দিল্লি।
সূত্র : স্ক্রলডটইন, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, এনডিটিভি