লিবিয়ায় বন্যা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২২ এএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৪১ এএম
লিবিয়ার দেরনা শহর ঘূর্ণিঝড় দানিয়েলের আঘাতে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর তোলা। ছবি : সংগৃহীত
লিবিয়ার ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ৫ হাজার ৪০০-এর বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। এ অবস্থায় নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মরদেহ সৎকারের জন্য ব্যাগের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
নিহত আসলে কত
যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দেরনা নামের যে শহরটিতে ঘূর্ণিঝড় দানিয়েল আঘাত হেনেছে সেটা শাসন করেন স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘ নিয়োজিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট তারেক আল-খাররাজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, বুধবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৯০ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার মরদেহের মধ্যে অন্তত ৪০০ বিদেশি, যাদের অধিকাংশ সুদান ও মিসরের নাগরিক।
কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী হিচেম আবু চকিয়াত রয়টার্সকে বলেন, বুধবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৪০০-এর বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত উদ্ধার করা হয়েছে ৭ হাজারের বেশি। নিহতের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
অন্যদিকে দেরনার মেয়র আবদুলমেনাম আল-গাইথি সৌদি টেলিভিশন আল-আরাবিয়াকে জানান, নিহতের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। কারণ যে পরিমাণ মানুষ নিখোঁজ রয়েছে তার সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ব্যাগের সংকট
মরদেহ দাফনের জন্য ব্যাগের তীব্র সংকট চলছে বলেও জানান মেয়র আবদুলমেনাম আল-গাইথি। তিনি বলেন, বিদেশি সহায়তার মধ্যে ত্রাণের পাশাপাশি আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার মরদেহ সৎকারের ব্যাগ। কারণ মরদেহ দ্রুত সৎকার করা না গেলে শহরে মহামারি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ।
উদ্ধার তৎপরতা
জাতিসংঘ নিয়োজিত কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু উদ্ধারকারী দলও ইতোমধ্যে দেরনায় পৌঁছেছে। শুরু থেকে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তা ছাড়া বিদেশি কিছু দেশও ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। মিসর, তিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক ও কাতারের উদ্ধারকারী দল দেরনায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
স্থানচ্যুতি
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, এক দশকের সংঘর্ষে লিবিয়ার বন্যাকবলিত অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্বাস্তু প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। সোমবারের (১১ সেপ্টেম্বর) আকস্মিক বন্যায় এবার সেখানে নতুন করে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ স্থানচ্যুত হলো। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
‘কেয়ামতের’ নমুনা
দেরনা লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজির একটি বন্দরনগরী। উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী এ শহরে মাঝেমধ্যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানিয়েল যে গতিতে আঘাত হেনেছে তা নতুন কিছু নয়। কিন্তু দেরনা জেলার দুটি পুরোনা বেড়িবাঁধ দানিয়েলের সেই ঝোড়ো গতি সহ্য করতে পারেনি। বাঁধ দুটি ভেঙে গিয়ে শহরটির কোনো কোনো এলাকা প্রায় ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই শহরটির তিন-চতুর্থাংশ বন্যার পানিতে ডুবে যায়। তীব্র স্রোতে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া বাসিন্দাদের কেউ কেউ এটাকে ‘কেয়ামতের’ নমুনা বলে মন্তব্য করেছেন।
সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স