প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৪৮ পিএম
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি জ্বেলে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক নারী। ছবি : সংগৃহীত
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন ও তার ডানহাত খ্যাত দিমিত্রি উৎকিনকে সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, বাছারা সতর্ক থেকো।
প্রিগোজিন ও তার ছয় সহযোগীর মৃত্যু নিয়ে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) মন্তব্য করেন লুকাশেঙ্কো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র লুকাশেঙ্কো বলেন, ওয়াগনারপ্রধানকে আমি দুইবার সতর্ক করেছিলাম। দুইবারই প্রিগোজিন আমার হুঁশিয়ারী ওড়িয়ে দেন।
প্রথমবার করেছিলেন ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর গত জুনে। লুকাশেঙ্কো তখন প্রিগোজিনকে বলেছিলেন, তোমার সেনারা মস্কো অভিমুখে মার্চ অব্যাহত রাখলে, তোমাকে মরতে হবে। উত্তরে প্রিগোজিন বলেছিলেন, সব কিছু জাহান্নামে যাক, মৃত্যুকে আমি পরোয়া করি না।
দ্বিতীয়বার করেছিলেন ২৩ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনার আগে। তখন প্রিগোজিন ও তার সহচর উৎকিনকে লুকাশেঙ্কো বলেছিলেন, বাছারা, তোমারা তো প্রাইভেট জেটে করে যাচ্ছ, সাবধান থেকো কিন্তু।
বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বেলটিএ জানায়, ২৩ আগস্টের ওই বিমান দুর্ঘটার আগে ঠিক কখন প্রিগোজিনদের সঙ্গে লুকাশেঙ্কোর কথা হয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২৩ আগস্ট মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবুর্গে যাওয়ার পথে রাশিয়ার টিভের অঞ্চলে প্রিগোজিনদের বহনকারী জেটটি বিধ্বস্ত হয়। এতে সাত যাত্রী ও তিন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের সবাই ওয়াগনারের শীর্ষ কর্মকর্তা। সেন্ট পিটার্সবুর্গে ওয়াগনারের প্রধান কার্যালয় তাদের গন্তব্য ছিল।
যাত্রীদের তালিকায় নাম থাকলেও শেষ মুহুর্তে গ্রিগোজিন বিমানে ওঠেছিলন কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রবল ধারণা করা হচ্ছে প্রিগোজিনসহ সবাই নিহত হয়েছেন। কিন্তু রাশিয়া প্রিগোজিনের মৃত্যু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। অন্যদিকে প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে নিজেরা নিশ্চিত নয় বলে শুক্রবার মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য।
প্রিগোজিনদের বহনকারী জেটি কীভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তা কী নিছক দুর্ঘটনা নাকি দুর্ঘটনার পেছনে কোনো ছক আছে তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। একটা মত হলো, পুতিনের নির্দেশেই জেটটাকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এমন সম্ভাবনা কোনো মতেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন লুকাশেঙ্কো।
লুকাশেঙ্কো বলেন, পুতিনকে আমি চিনি। তিনি খুব হিসেবি। বেশা শান্ত স্বভাবের। শান্ত স্বভাবের কারণে সিদ্ধান্ত নিতে তার অনেক সময় দেরি হয়। পুতিন এমনটি (প্রিগোজিনদের বিমান ভূপাতিত করার নির্দেশ) করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। যারা এমনটি বলছে তারা যাচ্ছেতাই বলছে। এসব মন্তব্য অপেশাদার।
একই বিষয়ে শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এটা ডাহা মিথ্যা। অন্যদিকে ফরেনসিক প্রতিবেদন আসলে ভূপাতিত বিমানে ওয়াগনারপ্রধান ছিল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি ।
২৩ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনার ঠিক দুই মাস আগে ২৩ জুন রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ওয়াগনারপ্রধান প্রিগোজিন। তারা দক্ষিণ রাশিয়ার প্রধান সামরিক কার্যালয় রোস্তভ-অন-ডন দখল করে নেন। ওয়াগনারের আরেকটি অংশ রাজধানী মস্কোর দিকে মার্চ শুরু করে।
এ ঘটনাকে সুস্পষ্ট দেশদ্রোহিতা বলে মন্তব্য করেন পুতিন। প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। পরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সহায়তায় প্রিগোজিন ও রুশ সেনাবাহিনীর মধ্যে মীমাংসা হয়। মীমাংসা হওয়ায় মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।
পরে ওয়াগনারের সেনাদের বড় একটি অংশ রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। অনেকে চাকরি ছেড়ে দেয়। আরেকটি অংশ নিয়ে বেলারুশ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন প্রিগোজিন।
বুধবার জেট দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার দুয়েকদিন আগে আফ্রিকা থেকে রাশিয়ায় ফেরেন প্রিগোজিন। সেখানে ভাড়াটে সেনা পরিচালনার পাশাপাশি তেল-গ্যাস, হীরা ও অন্য মূলবান পাথরের ব্যবসা করতেন প্রিগোজিন।
সূত্র : আরটি, আলজাজিরা, বিবিসি