নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩৮ পিএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৪০ পিএম
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় ইকোওয়াসের নেতারা। ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার। ছবি : সংগৃহীত
নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে আঞ্চলিক জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক করেছে। এতে নাইজারে সামরিক অভিযান শুরুর জন্য সদস্যদের সেনাবাহিনী প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। ইকোওয়াসের সামরিক অভিযানকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নাইজারে বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ পুরো আফ্রিকায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৫ সদস্যের ইকোওয়াসের বর্তমান প্রেসিডেন্সি নাইজেরিয়ার হাতে। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দেশটির রাজধানী আবুজায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৩ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অনুপস্থিত ছিল মালি ও বুরকিনা ফাসো। তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। কারণ নাইজারে বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপকে নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশ দুটি।
ইকোওয়াসের বিবৃতিতে বলা হয়, নাইজারে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা ফেরানোকেই এখন পর্যন্ত উৎকৃষ্ট পন্থা বলে মনে করি আমরা। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের কাছে নাইজারের অভ্যুত্থানকারীদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যতায় দেশটিতে আমরা সেনা পাঠাতে বাধ্য হব।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু বলেন, আমরা সব অপশন নিয়ে ভাবছি। সবকিছু ব্যর্থ হলেই কেবল সেনাবাহিনীর কথা ভাবা হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস নাইজারে শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রকে ফেরাতে সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
বাজুমকে আটক করা ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসান আউত্তারা। ইকোওয়াসের বৈঠকে তিনি বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানকে আমরা মেনে নিচ্ছি না। আগামীতে কখনো মেনে নেবেও না। এসব জান্তা কমান্ডারদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তারা যদি বাজুমকে ক্ষমতায় ফেরাতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে সামরিক অভিযান ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না।
ইকোওয়াসের বৃহস্পতিবারের বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ইকোওয়াসের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। আমরা নাইজারের সামরিক সরকারকে সরে দাঁড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি। দেশটিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তবে শান্তপূর্ণ উপায়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটাতে গণতন্ত্র ফেরানোই যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার।
নাইজারের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে গত সপ্তাহে রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আফ্রিকান ফ্রিডম ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন নিয়ামসি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নাইজারের সামরিক সরকারকে বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা হবে ভয়াবহ। এতে করে পুরো আফ্রিকায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৬ আগস্টের মধ্যে বাজুমের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নাইজারের জান্তাদের সময় বেঁধে দিয়েছিল ইকোয়াস। অন্যথায় সামরিক অভিযানের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও তা হয়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সামরিক অভিযানের দিনক্ষণ বা কোনো কোনো দেশ অভিযানে অংশ নেবে তা ঘোষণা করা হয়নি। বিদেশি অভিযানের শঙ্কায় ইতোমধ্যে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে নাইজারের জান্তা সরকার।
২৬ জুলাই প্রেসিডেন্টশিয়াস গার্ড মোহাম্মদ বাজুমকে গ্রেপ্তার করে। সেনাবাহিনী তাদের সমর্থন জানায়। বৃহস্পতিবার ২১ সদস্যের সরকার ঘোষণা করেছে জান্তা।
জান্তা সরকার যে কোনো ধরনের বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে ঘোষণা দিয়েছে। জেনারেল সালিফু মুডি নামের জান্তার এক নেতা রাশিয়ার ভাড়াটে সামরিক গোষ্ঠী ওয়াগনারের সহায়তা চেয়েছে বলে জানা গেছে। মালি, বুরকিনা ফাসো, সুদান, মুজাম্বিক ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ওয়াগনারের সেনা রয়েছে।
সূত্র : আরটি, আলজাজিরা, রয়টার্স