প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২৬ পিএম
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৩৪ পিএম
ইমরান খান। ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যুক্তরাষ্ট্র নির্দেশ দিয়েছিল। একটি তার বার্তার বরাতে এমনটা দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে ইন্টারসেপ্ট জানায়, ২০২২ সালের ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খানের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু। লু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় এশীয় বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুই কর্মকর্তার বৈঠকের সারমর্ম সংক্রান্ত একটি তার বার্তা ইন্টাসেপ্টের হাতে এসেছে।
তার বার্তা অনুযায়ী লু আসাদ মজিদকে বলেন, ইউক্রেন নিয়ে পাকিস্তান ভয়াবহ রকমের নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কর্মকর্তারা পছন্দ করছেন না। প্রধানমন্ত্রীই (ইমরান খান) এককভাবে এই ধরনের আক্রমণাত্মক নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য দায়ী।
রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ লুকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, ইউক্রেন নিয়ে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ অবস্থান একটি সরকারি সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে বাকি মন্ত্রীদেরও সম্মতি রয়েছে।
কিন্তু নিজের অবস্থানে অটল থেকে ইমরান খানকেই বারবার দোষ দিতে থাকেন লু। এক পর্যায়ে লু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান) অবস্থান সমস্যাজনক। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনা হবে। এটা সফল হলে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের সব কিছু ক্ষমা করে দেবে ওয়াশিংটন। সংশ্লিষ্টদের পুরস্কৃত করা হবে।
অনাস্থা ভোটে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করা না গেলে পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত দুঃসময় অপেক্ষা করছে বলেও হুমকি দেন লু। যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা বলেন, তখন প্রধানমন্ত্রীকে একঘরে করার সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করেব ইউরোপ।
লুর সঙ্গে আলাপের বিষয় নিয়ে ইমরান খানের কাছে একটি নোট পাঠান আসাদ মজিদ। এতে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকিটা সরাসরি হোয়াইট হাউস থেকেই আসছে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
নিজের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল বলে বারবার দাবি করেছেন ইমরান খান। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও বিষয়টা এক ধরনের স্বীকার করেছেন। কিন্তু ইমরানের ক্ষমতাচ্যুতির সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে ওয়াশিংটন।
ক্ষমতাচ্যুতির পর আগাম নির্বাচনের দাবিতে অনেকগুলো সমাবেশ ও লংমার্চ করেন ইমরান খান। একটি লংমার্চে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি মামলা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের একটি মামলায় তার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এখন তিনি কারাগারে।
রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির অভিযোগে করা এই মামলা ‘তোষাখানা মামলা’ হিসেবে পরিচিত। কারদণ্ডের পাশাপাশি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধানকে এক লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার (৯ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় আইনসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আদেশে তা করা হয়। এখন শাহবাজ ও বর্তমান পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতার সিদ্ধান্তক্রমে একজন মধ্যবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনোনিত করা হবে। তিনি ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করবেন।
সূত্র : আরটি, দ্য ইন্টারসেপ্ট, জিওনিউজ