× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্লেষণ

জার্মানি-রাশিয়া গ্যাসপাইপে বিস্ফোরণে কার কী লাভ

তারেক খান

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২ ১৫:০৮ পিএম

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২ ১৮:২৪ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার তোড়জোড়ের মধ্যে ‘নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে’ ভারী বিস্ফোরক দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর বিস্ফোরণের খবর গণমাধ্যমে আসার পরপর প্রেসিডেন্ট পুতিন অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন করার ঘোষণা দেন। কেন? রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস নেওয়ার এ দুটি পাইপলাইনে কী আছে? 

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে যে দ্বন্দ্ব, এ বিস্ফোরণ তার চেয়ে বড় কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে শঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ম্যাটেউজ মোরায়েকিসহ অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পাইপলাইনকে বলেছিলেন আতঙ্কজনক, যার ভিডিও বিবিসি প্রকাশ করে ২০১৯ সালে। বিবিসির ভাষায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেজায় ক্ষেপেছে এবং অধৈর্য হয়ে গেছে। কারণ ইউরোপের বিস্তৃত গ্যাসের বাজারে রাশিয়ার একচেটিয়া বাণিজ্য নিশ্চিত হতে যাচ্ছিল এ পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে।

শেষ পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গ্যাস পাইপলাইনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এতে থমকে যায় ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাসবাণিজ্য। তারপর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২ নামের পাইপলাইন দুটির এমন ক্ষতি করা হলো, যাতে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ইউরোপে গ্যাসের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র তাদের গ্যাস দিতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের নিজেদেরই যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস নেই। তাদের চলে প্রধানত কানাডার গ্যাস দিয়ে। তবে তারা আমদানির পর রপ্তানি করতে সিদ্ধহস্ত। তা ছাড়া নিজেদের ব্যবসাই শেষ কথা নয়। শত্রুকে জব্দ করা সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ফাইল ছবি

তাহলে কি এ বিস্ফোরণের পেছনে তাদেরই হাত রয়েছে? এ বিষয়ে রাশিয়া সরাসরি অভিযোগ করেনি। কিন্তু ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জোর দিয়ে বলেছেন, ডেনমার্ক ও সুইডেন জলসীমায় যেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর সেনারা টহল দেয়। 

রাশিয়ার আঙুল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে, বলাই বাহুল্য।

গত মাসের প্রথমদিকে পাইপলাইনে একটি ছিদ্র হওয়ার খবর আসে। তখন এ নিয়ে উচ্যবাচ্য হয়নি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিপুল পরিমাণ গ্যাস পানির নিচ থেকে ধেয়ে আসতে থাকলে সুইডিশ কোস্টগার্ড ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। তখনই প্রশ্ন ওঠে এটি নাশকতা কি না। পরে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানান।

জার্মান ম্যাগাজিন স্পিগেলের বরাতে দ্য গার্ডিয়ান ডটকম বলছে, গোয়েন্দা সূত্রগুলো বিশ্বাস করে, পাইপলাইনগুলোর চার জায়গায় বিস্ফোরণে আঘাত করা হয়েছে ‘৫০০ কেজি টিএনটি’ দিয়ে, যা বড়োসড়ো বিমানবোমার সমান। জার্মান তদন্তকারীরা বিস্ফোরণের শক্তি পরিমাপের উদ্যোগ নিয়েছেন।

সমুদ্রের গভীর তলদেশে এত বিস্ফোরক কীভাবে নেওয়া হলো, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইন্টেলিজেন্সগুলো বলছে, রাষ্ট্রীয়-সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এমন বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব না। বিস্ফোরক বহনে ছোট ডুবোজাহাজ ব্যবহার হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন অনেক গোয়েন্দা।

রাষ্ট্রীয়-সংশ্লিষ্টতার সামনে আছে রাশিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

যুক্তরাষ্ট্রের দিকে রাশিয়া শুধু আঙুল তুলেই ক্ষান্ত হয়েছে। 

কিন্তু মার্কিনপক্ষ রাশিয়াকে শুধু দায়ী করছে না, তারা রাশিয়াকে একেবারে ধুনে দিচ্ছে। তাদের যুক্তি, পশ্চিমাদের জ্বালানি সংকট বাড়িয়ে তুলতে এবং পরিবেশ দূষিত করতে রাশিয়া পরিকল্পিতভাকে গ্যাসপাইপে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিংক ট্যাংক এইআইয়ের সিনিয়র ফেলো এলিজাবেথ ব্রাউ বলছেন, পশ্চিমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে রাশিয়া। সেপ্টেম্বরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভ্লাদিমির পুতিনসহ রাশিয়ার কর্মকর্তারা পশ্চিমা সরকারগুলোকে হুমকি দিয়েছে ইউক্রেনকে সামরিক সমর্থন না দিতে; পারমাণবিক হামলার ভয়ও দেখিয়েছে৷ কিন্তু সে ভয় কাজে লাগেনি। এখন রাশিয়া একটি নতুন কৌশল পরীক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে: চুপচাপ বাল্টিক সাগরের ক্ষতি করছে। বিপুল মিথেন গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা বাতাস দূষিত করার জন্য প্রায় ২৯ গুণ বেশি শক্তিশালী কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে।

ফাইল ছবি

বাল্টিক সাগরকে দূষিত করার জন্য কালিনিনগ্রাদ থেকে নর্দমার ময়লা, বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, সেটিও এলিজাবেথ ব্রাউ সামনে নিয়ে এসেছেন। কালিনিনগ্রাদ ইউরোপ-পরিবেষ্টিত রাশিয়ার ছিটমহল। ব্রাউ বলছেন, প্রতিবেশীদের অনুরোধ সত্ত্বেও রাশিয়ার ছিটমহল কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাল্টিক সাগরের পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী বেশিরভাগ হটস্পট কালিনিনগ্রাদ এবং রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ দূষিত করার অভিযোগ আরও অনেকে তুলেছেন। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী অন্য পাইপলাইনের ক্ষতিও রাশিয়া করতে পারে, সে আশঙ্কার কথা বলছেন কেউ কেউ। রাশিয়া সাবমেরিন ডাটা কেবলের ক্ষতি করে পশ্চিমাদের চাপে ফেলতে পারে—গ্যাসপাইপ প্রসঙ্গে সেই আশঙ্কার কথাও এসেছে।

—এর চেয়ে বেশি কোনো যুক্তি পশ্চিমারা হাজির করতে পারে নাই।

এ ক্ষতির জন্য রাশিয়া তার নিজের পায়ে কত জোরে কুড়াল মারবে? ১১ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পে রাশিয়ার নগদ বিনিয়োগ ৫০ শতাংশ। মানে সাড়ে ৫ বিলিয়ন। প্রতি ডলারের দাম ১০০ টাকা হলে এটি দাঁড়ায় ৫৫ হাজার কোটি টাকায়। এটা রাশিয়ার বিনিয়োগ। সিএনএন প্রতিবেদন বলছে, এখান থেকে রাশিয়ার বার্ষিক আয়ের সম্ভাবনা ১৫ বিলিয়ন ডলার। লন্ডন থেকে ইভানা কোটাসোভা ও চার্লস রিলি সিএনএনের বাণিজ্য বিভাগের এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত বলেছেন, এ প্রকল্প থেকে ইউরোপ-রাশিয়ার বিনিয়োগ ও লাভের পরিমাণ সম্পর্কে।

প্রশ্ন, রাশিয়া তার এমন প্রকল্প নিজেই অচল করে দেবে? ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পশ্চিমাদের প্রপাগান্ডা হাস্যকর। 


প্রবা/এসএফ/এমজে/ইউরি

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা