প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩ ২১:০৩ পিএম
সুপ্রিম কোর্টের অধিকার খর্বকারী বিলে সম্মতি দিয়ে সেটিকে আইনে পরিণত করেছেন ইসরায়েলের আইনসভা নেসেটের সদস্যরা। বিচারব্যবস্থার ক্ষমতাকে কমাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসন যে কয়টি প্রস্তাব সামনে এনেছিল, এটি ছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইন হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে অযৌক্তিক মনে করলেও সরকারের কোনো কাজকে আটকাতে পারবেন না সুপ্রিম কোর্ট। অনেকের মতে, নেতানিয়াহু প্রশাসনের এরকম পদক্ষেপের জেরে গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে আসবে ইসরায়েল। তবে গোটা বিষয়টি থেকে উদ্ভব হয়েছে নতুন এক পরিস্থিতির। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের এক টানাপড়েনের মধ্যে প্রবেশ করেছে ইসরায়েল।
এমনিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক ততটা মসৃণ ছিল না। এখন এ ঘটনার জেরে তা আরও অবনতির দিকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাইডেন নিজ দেশে এবং দেশের বাইরে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার পক্ষে। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আদর্শ অনেক দিক থেকেই মেলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে।
সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক পদক্ষেপে হতবাক হয়ে গেছে ওয়াশিংটন। এটি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যকার বিভেদও অনেকটা বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ রিপাবলিকানদের বড় একটি অংশ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করে।
ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক হুমকির মুখে রয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনও সামনে আসেনি। বাইডেনও বহু আগে থেকেই বলেছেন, দুই দেশের বন্ধন বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো নয় বলে মনে করেন তিনি। কংগ্রেসেও ইসরায়েলের জন্য সমর্থন রয়েছে। প্রতি বছর তারা শত কোটি ডলার মার্কিন সহায়তায় অনুমোদন দেয়।
কিন্তু সবকিছু যেন বিগড়ে দিয়েছে ইসরায়েলের বিচারব্যবস্থা সংস্কারের পরিকল্পনা। এটি নিয়ে যে বাইডেন প্রশাসন উদ্বিগ্ন, তা তারা গোপন রাখেনি। গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপেও বাইডেন প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলেন। এমনকি নিউ ইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কলাম লেখক থমাস ফ্রিডম্যানকে তিনি ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানান এবং ইসরায়েলের বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করেন। রবিবার এক নজিরবিহীন বিবৃতিও প্রকাশ করেন বাইডেন। সেখানে তিনি বলেন, ইসরায়েল এ মুহূর্তে যে পরিসরের হুমকি ও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, তাতে দেশটির নেতাদের এটি নিয়ে তাড়াহুড়া করার কোনো অর্থ হয় না- মূল মনোযোগ হওয়া উচিত মানুষকে একাট্টা করা এবং ঐকমত্যে আসা। তারপরও ইসরায়েল কর্ণপাত করেনি। সোমবার নেসেটের ভোটের পর বাইডেনের প্রেস সচিব ক্যারিন জন-পিয়েরে ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং ‘ঐকমত্যের’ আহ্বান জানান।
সিএনএন বলছে, নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারেÑ এমন কোনো ইঙ্গিত এখনও মেলেনি। কিন্তু এর প্রভাব হয়তো পড়তে পারে রাষ্ট্রীয় সফরে। বাইডেনের মেয়াদে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর হোয়াইট হাউস সফর হয়তো অধরাই থেকে যেতে পারে।
দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে কাজ করা অ্যারন ডেভিড মিলার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট এখানে অতি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টরা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে লড়তে পছন্দ করেন না। এটি বিরক্তিকর, বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিকভাবে ঝামেলাপূর্ণ। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বা ইসরায়েলের সরকার যা করছে তাতে প্রভাব ফেলবে এমন কিছু মনে হয় বাইডেনেরও করার ইচ্ছা নেই।