প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ১৬:৩৬ পিএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩ ১৬:৫৮ পিএম
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই হাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষমতাসহ নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব করেছে তালেবান। ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ সোমবার (১৯ জুন) বলেছেন, তালেবান দ্বারা আফগান নারী ও মেয়েদের সঙ্গে আচরণ ‘লিঙ্গ বর্ণবৈষম্য’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। কারণ শাসক কর্তৃপক্ষ দ্বারা তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
আফগানিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক রিচার্ড বেনেট বলেন, ‘নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে গুরুতর, পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য তালেবানের আদর্শ ও শাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যা লিঙ্গ বর্ণবৈষম্যের জন্য দায়ী হতে পারে এমন উদ্বেগের জন্ম দেয়।’
বেনেট জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে ওই প্রতিবেদন পেশ করেন।
জাতিসংঘ লিঙ্গ বর্ণবৈষম্যকে ‘লিঙ্গ বা লিঙ্গের কারণে ব্যক্তিদের প্রতি অর্থনৈতিক ও সামাজিক যৌন বৈষম্য’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে থাকে।
বেনেট মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৩তম নিয়মিত অধিবেশনের পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা লিঙ্গ বর্ণবৈষম্যের আরও অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করেছি, যা বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ নয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ণবাদের সংজ্ঞার মতোই আফগানিস্তানে বর্ণের পরিবর্তে যৌনতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
আফগান শাসকরা ২০২১ সালে দেশটির ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নারীদের অধিকারের ওপর তাদের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে লাখ লাখ নারীকে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান থেকে নিষিদ্ধ করেছে।
যদিও তালেবানের মুখপাত্র জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে অভিহিত করেছেন।
দুই দশকের যুদ্ধ ও দখলদারত্বের অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী দেশ থেকে প্রত্যাহার করার পর তালেবান ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করে।
প্রশাসন তখন থেকে হাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষমতাসহ নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার খর্ব করেছে। শুধু মেয়েদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা আছে।
লিঙ্গ বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে অবকাঠামোগত উন্নতির পর মেয়েদের জন্য উচ্চ বিদ্যালয় খোলার প্রতিশ্রুতি থেকেও সরে এসেছে তালেবান।
জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২২ কভার করা একটি প্রতিবেদনে বেনেট মার্চ মাসে দেখেছেন, তালেবানদের দ্বারা নারী ও মেয়েদের প্রতি আচরণ ‘লিঙ্গ নিপীড়ন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ডিসেম্বরে সাহায্য গোষ্ঠীর জন্য নারীদের কাজ করা বন্ধ করার পর এপ্রিল মাসে তালেবান কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের জন্য কাজ করা আফগান নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা শুরু করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টও (আইসিজে) মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ওই প্রতিবেদনে তারা প্রকাশ করেছে, কীভাবে আফগান নারীদের অধিকারের ওপর তালেবানদের কারাবাস, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং অন্যান্য দুর্ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অধীনে লিঙ্গ নিপীড়ন অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে।
তালেবান প্রশাসনের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জাতিসংঘ এবং কিছু পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেনেটকে ইসলামি শাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে ইসলামি আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাদের ওই আপত্তির মানে ইসলামের সঙ্গে তাদের সমস্যা রয়েছে।’
আফগান শাসকরা তাদের ইসলামের অপব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জায়েজ করেছে।
তবে কয়েকজন সিনিয়র তালেবান নেতা মেয়েদের স্কুলে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে বলেছেন, ইসলাম মেয়ে ও নারীদের শিক্ষা ও কাজের অধিকার দেয়।
অন্য কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মেয়ে ও নারীদের শিক্ষা ও কাজ থেকে নিষিদ্ধ করে না।
সূত্র : আল-জাজিরা