প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ১৬:০৯ পিএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩ ১৬:২২ পিএম
হিমালয়ের হিমবাহ গলার একটা দৃশ্য। নেপালের খুম্বু হিমবাহ। ছবি : সংগৃহীত
হিন্দুকুশ হিমালয়ের হিমবাহ ২১০০ সালের শেষ নাগাদ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত গলে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হতে পারে। এটা ঠেকাতে হলে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর কোনো বিকল্প নেই।
৭৭ বছরের মধ্যে সমগ্র হিন্দুকুশ হিমালয়ের ৮০ শতাংশ হিমবাহ গলে গেলে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেউ ভুগবে পানিশূন্যতায়, আর কেউ তলিয়ে যাবে বন্যায়। বাড়বে আকস্মিক বন্যা, তুষার বৃষ্টির মতো দুর্যোগ।
ফলে হিন্দুকুশ হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী ২৪ কোটি এবং হিন্দুকুশের পাদদেশে বসবাসকারী আরও ১৬৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখে পড়বে। সংকুচিত হবে পশু-পাখির চারণভূমি, ফসলি জমি, বাসস্থান। তীব্র আকার ধারণ করতে পারে মিঠা পানির সংকট।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের একটা যৌথ প্রতিবেদনে এসব হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) মঙ্গলবার (২০ জুন) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটির বরাতে রয়টার্স জানায়, হিন্দুকুশ হিমালয় বলতে যা বোঝায় তা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।
এ অবস্থায় শিল্পযুগের আগের তুলনায় বিশ্বের উষ্ণতা চলতি শতাব্দীর শেষে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সমগ্র হিমালয়ের ৩০ শতাংশ হিমবাহ গলে যেতে পারে। আর উষ্ণতা ২ ডিগ্রিতে পৌঁছলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ।
উষ্ণতা যদি ৩ ডিগ্রিতে পৌঁছায় তাহলে ২১০০ সালের শেষের দিকে ৭৫ শতাংশ হিমবাহ গলার শঙ্কা রয়েছে। আর উষ্ণতা ৪ ডিগ্রিতে পৌঁছলে একই সময়ে হিমালয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ হিমবাহ গলে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনে। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নেপাল ও ভুটান।
২০০০ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে হিমালয়ের হিমবাহ যে গতিতে গলেছে, ২০১০ সালের পর তার গতি ৬৫ শতাংশ বেড়েছে, যা ইতঃপূর্বে আর কখনও দেখা যায়নি।
আল-জাজিরা জানায়, সাম্প্রতিক আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্টের হিমাবাহ গত ২ হাজার বছরে যে পরিমাণ গলেছে, গত ৩০ বছরে তার প্রায় সমান গলে গেছে।
আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ফিলিপাস ওয়েস্টার বলেন, ’ইউরোপের আল্পস বা উত্তর আমেরিকার রকি মাউন্টেইনস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত জরিপ করা হয়। এসব পাহাড় রেঞ্জের অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, হিমালয়ের তা নেই। তাই হিমালয়ের অনেক কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না। কিন্তু হিমালয়ের হিমবাহ যে রেকর্ড গতিতে গলছে, তা নিয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে তা স্পষ্ট।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে থাকা দেশগুলো। উদহরণস্বরূপ চীনের কথা বলা যায়, দেশটি নিজেদের শুকিয়ে যাওয়া নদীর প্রবাহ ঠিক করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা