প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩ ২২:৪৭ পিএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : প্রবা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে বেলারুশে তাদের কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এক ফোরামে বলেন, এটা তখনই ব্যবহার করা হবে, যখন রাশিয়ার কোনো অঞ্চল বা রাষ্ট্র হুমকিতে পড়বে। পাশাপাশি পশ্চিমাদের সতর্ক করতেই বেলারুশে এই অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন পুতিন।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। পুতিনের মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা এমন কোনো লক্ষণ দেখছি না যে, রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তবে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেজান্দার লুকাশেঙ্কোর সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কূটনীতিক। তিনি বলেন, নিজ দেশে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অনুমতি দিয়ে কাজটি ভালো করেননি প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। তিনি সংঘাতকে আরও উস্কে দিয়েছেন। বেলারুশ রাশিয়ার প্রধান মিত্র। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন যখন ইউক্রেনে অভিযান শুরু করেন, তখন বেলারুশে অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছিল।
সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক ইকোনমিক ফোরামে বক্তৃতা শেষে এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, তার এই পদক্ষেপটি মূলত ‘নিয়ন্ত্রণ’ এবং যারা ‘আমাদের কৌশলগত পরাজয়ের চিন্তা করছে’ তাদের সতর্ক করার জন্য। বেলারুশে স্বল্পপাল্লার টেকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে পশ্চিমাদের এটা স্মরণ করিয়ে দিতে যে, তারা রাশিয়াকে সামরিকভাবে পরাজিত করতে পারবে না।
পুতিন তার বক্তব্যের মাধ্যমে প্রথমবার বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পুতিন বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা আমাদের মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্রের কিছু অংশ বেলারুশের ভূখণ্ডে স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করছিলাম, এটা হয়ে গেছে। পারমাণবিক ওয়ারহেডের প্রথম অংশটুকু বেলারুশের ভূখণ্ডে চলে গেছে, তবে কেবল প্রথম অংশটুকুই গেছে। আমরা পুরো কাজ গ্রীষ্মের শেষ বা বছর শেষ হওয়ার আগেই সমাপ্ত করে ফেলব।’
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা নিয়ে ফোরামের পরিচালকের করা প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ‘আমরা পুরো পৃথিবীকে কেন হুমকি দেব? আমি আগেই বলেছি যে, আমরা এই চরম পদক্ষেপ তখনই নেব যখন রাশিয়ার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসবে।’
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বলতে ছোট পারমাণবিক ওয়ারহেড বোঝায়। এ ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে সীমিতভাবে ব্যবহারের জন্য এক ধরনের ‘ডেলিভারি সিস্টেম’ বা সরবরাহ ব্যবস্থা এ অস্ত্রের অংশ। সাধারণত সীমিত আক্রমণের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়। এগুলো এমনভাবে তৈরি যে, এটি শত্রুকে একেবারে নির্দিষ্ট জায়গায় আঘাত করতে পারে এবং তেজস্ক্রিয়তা অতটা ছড়ায় না।
সবচেয়ে ছোট কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের ওজন এক কিলোটন বা তার কম (এক হাজার কেজি টিএনটি বিস্ফোরকের সমপরিমাণ)। আর সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রের ওজন ১০০ কিলোটন পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় যে বোমা ফেলেছিল সেটির ওজন ছিল ১৫ কিলোটন।
রাশিয়ার নেতারা সেন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। শুক্রবার তারা কিয়েভ সফর করেছেন এবং দুটি দেশের কাছেই তারা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তারা কিয়েভে থাকাকালীন শহরটি রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা দুটি দেশকেই যুদ্ধ থেকে সরে এসে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি শুনতে এবং ইউক্রেনের জনগণের যেটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়াতে।’
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আগ্রাসনের জন্য তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। কিয়েভ মস্কোর সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবে না যতক্ষণ তারা ইউক্রেনের অঞ্চল দখল করে রাখবে বলে উল্লেখ করেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন যে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে তাতে তাদের সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। খুব শিগগিরই তাদের নিজস্ব সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে এবং তখন তাদের শুধু পশ্চিমাদের দেওয়া সরবরাহ ব্যবহার করতে হবে। পুতিন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি ইউক্রেনকে কোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেওয়া হয়, ‘সেগুলো সব ধ্বংস হবে আর এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স