প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩ ১৪:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৩ ১৫:০৫ পিএম
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ব্যবসাকেন্দ্র, দোকান এবং আবাসিক কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর ওডেসায় বুধবার (১৪ জুন) ভোরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছে শহরটির কর্তৃপক্ষ।
অঞ্চলটির সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র সেরহি ব্রাচুক টেলিগ্রামে বলেছেন, ‘রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে একটি জাহাজ থেকে চারটি কালিব্র ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ওই ক্ষেপণাস্ত্র একটি খুচরা চেন গুদামে আঘাত হানলে তিন কর্মচারী নিহত এবং সাতজন আহত হন।
তিনি আরও বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি ব্যবসাকেন্দ্র, দোকান এবং একটি আবাসিক কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সামরিক প্রশাসনের মতে, শহরটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর আগে ওডেসা অনেক ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মানুষের জন্য ছুটি কাটানোর প্রিয় গন্তব্য ছিল।
আক্রমণ শুরুর পর থেকে ওডেসায় বেশ কয়েকবার বোমা হামলা হয়েছে।
জানুয়ারিতে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্রটিকে বিপজ্জনক স্থানের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় মস্কো ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলোয় তার রাত্রিকালীন আক্রমণ তীব্র করেছে।
এদিকে কিয়েভ রাশিয়ার বাহিনীর দ্বারা দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিজ শহর ক্রিভি রিহতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এক দিন পর সর্বশেষ হামলাগুলো হলো।
ক্রিভি রিহসহ দক্ষিণ-পূর্ব ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের কর্তৃপক্ষও রাশিয়ার নতুন ড্রোন হামলার খবর দিয়েছে।
আঞ্চলিক গভর্নর সের্হি লাইসাক টেলিগ্রামে বলেছেন, ‘ইরানি ড্রোন শাহেদকে এ অঞ্চলের আকাশে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। মস্কো বেআইনিভাবে তেহরানের ড্রোন ইউক্রেনে হামলার জন্য ব্যবহার করছে।’
অন্যদিকে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হচ্ছে বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যুদ্ধ সংবাদদাতাদের এক সভায় বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘কিয়েভের ক্ষতি একটি বিপর্যয়জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’
প্রমাণ না দিয়েই পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনারা ১৬০টির বেশি এবং রাশিয়া ৫৪টি ট্যাঙ্ক হারিয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনাক্ষয় রাশিয়ার তুলনায় ১০ গুণ বেশি এবং কিয়েভ কোনো সেক্টরেই সফল হয়নি।’
পুতিনের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এক মার্কিন কর্মকর্তা বেনামে এপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘মস্কোর মূল্যায়নকে গুরুত্বসহকারে নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ পুতিনের দাবি সঠিক নয়।’
পুতিনের ওই দাবি অস্বীকার করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও। জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেন, ‘যুদ্ধ এখনও চলছে।’
প্রতিটি পদক্ষেপ এবং ইউক্রেনের প্রতি মিটার ভূমি রাশিয়ার দখলমুক্ত করার জন্য তিনি ইউক্রেনীয় সেনাদের ধন্যবাদ জানান।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘কিছু সাফল্য এসেছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।’
এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বুধবার ঘোষণা করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ৬৮০ সেনার মৃত্যু, আটটি ট্যাঙ্ক ও একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস।
জেলেনস্কিও বাখমুতে অগ্রগতি দাবি করে বলেন, কিয়েভের পাল্টা আক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং পূর্ব দোনেৎস্ক ও দক্ষিণ-পূর্ব জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।’
মঙ্গলবার বিবিসিকে পূর্ব দোনেৎস্কর কিছু বসতিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল, যেখানে দেখা যায় এখন ইউক্রেনের পতাকা উড়ছে। অনেক এলাকা জনশূন্য এবং কিছু এলাকায় রাশিয়ার বাহিনী পিছু হটেছে।
ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘এটি এখনও প্রাথমিক অবস্থা। রাশিয়ার সেনাদের প্রত্যাহারে অগ্রগতি হয়েছে।’
হোয়াইট হাউসের এক বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেন, ‘আমরা যা জানি তা হলো ইউক্রেনের সেনারা যত বেশি ভূমি মুক্ত করতে সক্ষম হবে, ততই আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হবে রাশিয়া।’
অন্যদিকে রাশিয়ার অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা নিয়ে ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে। জেলেনস্কি মঙ্গলবার আবারও অস্ত্রের উপাদানগুলোর প্রবাহ বন্ধ করার জন্য মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : এনডিটিভি