প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩ ১৪:৪০ পিএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩ ১৪:৪৭ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন (বাঁয়ে) ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। ৭ জুন মধ্যরাতে জেদ্দার আস-সালাম রয়্যাল প্যালেসে। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান বুধবার (৭ জুন) মধ্যরাতে জেদ্দায় বৈঠক করেছেন। ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের বৈঠকে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তারা সারগর্ভ আলোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আলমনিটর জানায়, ব্লিনকেন তাদের প্রতিনিধিকে বলেছেন, আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে ‘গভীর’ আলোচনা হয়েছে।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা ব্লিনকেন ও সালমানের বৈঠক সম্পর্কে বলেন, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। উভয়ের স্বার্থ আছে এমন আলোচনাই গুরুত্ব পেয়েছে। তবে দুই পক্ষ যে সব বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সমুদ্রনগরী জেদ্দার আস-সালাম রয়্যাল প্যালেসে মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উভয় পক্ষের আরও দু’জন করে কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র ম্যাট মিলার জানান, ব্লিনকেন ও সালমানের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও প্রযুক্তিসহ নানান ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও মানবাধিকার নিয়েও তারা কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র। কিন্তু সালমান ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রনীতির পাশাপাশি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতিতেও উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন আসে। তিনি মস্কো ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কে জোর দেন। এতে করে ওয়াশিংটনে অসন্তোষ তৈরি হয়।
এ অবস্থায় ২০১৮ সালে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে আগে থেকে শুরু হওয়া টানাপোড়েন আরও গভীর হয়।
২০২০ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতায় এলে সৌদি আরবকে একঘরে করার ঘোষণা দেন জো বাইডেন । সেই অনুযায়ী ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্পের বাতিল করা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) বা ইরান পরমাণু চুক্তি নতুন করে শুরুর উদ্যোগ নেয় বাইডেন প্রশাসন। জেসিপিওএ নবায়নের অনেক উদ্দেশ্যের একটি ছিল সৌদি আরবকে চাপে রাখা।
কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে যায় ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর পর বাইডেনের প্রশাসনের ওপর শোধ নিতে শুরু করেন সালমান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য হুমকি সত্ত্বেও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তিন দফায় জ্বালানি তেল কম উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয় রিয়াদের নেতৃত্বাধীন ওপেকপ্লাস। এতে করে অন্য সদস্যদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় যুদ্ধরত রাশিয়া। বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ায় দুর্বল হতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব।
অন্যদিকে, চীনের সহায়তায় গত ১০ মার্চ শত্রু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সৌদি আরব। এতে করে সব দিক থেকে মধ্যপ্রাচী নীতি নিয়ে চাপে পড়ে যায় বাইডেন প্রশাসন।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সাত বছর পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে রিয়াদে নিজেদের দূতাবাসে কার্যক্রম শুরু করে তেহরান।
২০১৬ সালে শিয়া ধর্মগুরু নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। এর প্রতিবাদে তেহরানে সৌদি দূতাবাস ও মাশহাদ শহরে দেশটির কনস্যুলেটে হামলা হয়। হামলাকারীদের বলতে গেলে কোনো বাধাই দেয়নি ইরানি পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিবাদে তেহরানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতি টানে রিয়াদ।
সূত্র: আলমনিটর, এএফপি