× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিল্লির সংসদ ভবনে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩ ২৩:২৫ পিএম

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ১১:২৭ এএম

 ভারতের নতুন সংসদ ভবন । ছবি : সংগৃহীত

ভারতের নতুন সংসদ ভবন । ছবি : সংগৃহীত

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে একটি ‘অখণ্ড ভারত’-এর মানচিত্র রাখা হয়েছে, যেখানে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা সব দেশকেই দেখানো হয়েছে। ‘অখণ্ড ভারত’-এর ধারণাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শগত চিন্তার অন্যতম। ওই ধারণায় বলা হয়ে থাকে, প্রাচীনকালে ইরান থেকে বর্তমানের মিয়ানমার, উত্তরে তিব্বত, নেপাল, ভুটান আর দক্ষিণে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সবই ছিল অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে একটি দেশের সংসদ ভবনে প্রতিবেশী দেশগুলোর এলাকাসহ কোনো মানচিত্র কেন রাখা হবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদ ভবনের এই মানচিত্র নিশ্চিতভাবেই প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে একটা ভুল বার্তা দেবে।

কী এই ‘অখণ্ড ভারত’-এর ধারণা?

আরএসএস বলছে, প্রাচীনকালে যেসব এলাকায় ভারতীয় সংস্কৃতি ছিল, তা নিয়েই ‘অখণ্ড ভারত।’ আরএসএসের নেতা জিষ্ণু বসু বলছেন, ‘গান্ধার থেকে ব্রহ্মদেশ, দক্ষিণে সিংহল পুরো অঞ্চলজুড়েই তো একই সংস্কৃতি ছিল একটা সময়ে। এটাই তো ছিল ভারতের প্রাচীন রূপ। আফগানিস্তানের বামিয়ান বুদ্ধ বলুন বা সিন্ধু সভ্যতার যেসব নিদর্শন বর্তমান পাকিস্তানে আছে, সেগুলো তো ভারতেরই এলাকা ছিল। আবার বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে যে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হয়েছিল, সেটাও তো ভারতবর্ষেরই অঙ্গ ছিল। ভারতের এই সাংস্কৃতিক ইতিহাস যাতে মানুষ ভুলে না যায়, সে জন্যই অখণ্ড ভারতের চিন্তা তুলে ধরা হয়।’

হিন্দুত্ববাদের গবেষক ও সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলছেন, ‘শুধু যে সংঘের তাত্ত্বিক নেতারা এ নিয়ে লিখেছেন, তা নয়। সংঘের অধীন যে কয়েক হাজার স্কুল আছে বিদ্যা ভারতী নামে এবং সেসব স্কুল চালায় সংঘ, সেখানে একেবারে নিচু ক্লাস থেকে এই তত্ত্ব পড়ানো হয়। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের এই বিষয়টা পড়া বাধ্যতামূলক। পরীক্ষায় প্রশ্নও আসে।’

সংসদ ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র কেন?

কিন্তু সংঘের সেই চিন্তাধারার প্রতিফলন দেশের সংসদ ভবনে কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি বসু। তিনি বলেন, ‘এটা তো সরকারি সিদ্ধান্ত। তারা কেন এই মানচিত্র সংসদ ভবনে রেখেছে, কী চিন্তা করে রেখেছে, সেটা তো সরকার বলতে পারবে।’

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে সংসদীয় দপ্তরের মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘সংকল্পটা স্পষ্ট, অখণ্ড ভারত।’

কর্ণাটক বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ওই মানচিত্রের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের গর্বিত মহান সভ্যতার জীবনীশক্তির প্রতীক।’

লেখক ও প্রাবন্ধিক রন্তিদেব সেনগুপ্তের কথায়, ‘একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংসদে কেন কোনো একটা বিশেষ ধর্মের রীতি মেনে যজ্ঞ হবে! কেন সেখানে একটা ধর্মের সাধু-সন্ন্যাসীরা হাজির হবেন? কেন সেখানে আরএসএসের চিন্তা অনুসারে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র রাখা হবে? বার্তাটা খুব স্পষ্ট এর লক্ষ্য ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা।’

স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘অখণ্ড ভারতের তত্ত্বটিকে প্রাতিষ্ঠানিক সত্য হিসেবে প্রমাণ করতে নানা প্রচেষ্টা চলেছে। এর মধ্য দিয়ে সংঘের ওই মতাদর্শগত চিন্তাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো।’

‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ভুল বার্তা যাবে’

সংসদ ভবনে মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, পাকিস্তান ও নেপালের বিভিন্ন শহরের প্রাচীন নাম লেখা আছে, কিন্তু তিব্বত বা বাংলাদেশের অঞ্চলে কোনো প্রাচীন জনপদের নাম লেখা নেই।

তিব্বতের বিভিন্ন জনপদের প্রাচীন নাম লেখা হলে তা নিয়ে চীন আপত্তি তুলতে পারে ভেবেই সম্ভবত সেগুলোর নাম লেখা হয়নি। একই যুক্তিতে বাংলাদেশের অঞ্চলটিকে অখণ্ড ভারতের মধ্যে দেখানো হলেও সেখানকার কোনো প্রাচীন জনপদের নামও চিহ্নিত করা হয়নি। ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ইমন কল্যান লাহিড়ী বলেন, ‘এটা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছে ভারতের ভাবমূর্তি একেবারেই উজ্জ্বল করবে না। চারপাশে যতগুলো রাষ্ট্র আছে, প্রত্যেকের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে ভারত। এখন যদি অখণ্ড ভারতের মানচিত্র সংসদ ভবনে রাখা হয়, তার ঐতিহাসিক যৌক্তিকতা কতটা?’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবনতি হবে বলেই আমার মনে হয়।’ 

সূত্র : বিবিসি


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা