কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তালেবানপ্রধানের গোপন বৈঠক

কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি তালেবানপ্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার সঙ্গে আফগানিস্তানে সম্প্রতি গোপনে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি, নারী অধিকার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার বিস্তারিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

আলোচনাসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ১২ মে আফগানিস্তানের কান্দারে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি ও তালেবানপ্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা একান্তে বৈঠক করেন। তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেন। দু-এক দফায় তারা দুই জন ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। 

কাতারের প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে তালেবানপ্রধানের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পেতে তালেবান সরকারকে কী কী করতে হবে, তা নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এই দুই নেতার আলোচনার বিস্তারিত ইতোমধ্যে বাইডেনকে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অপ্রত্যক্ষভাবে পুরো বিষয়টা সমন্বয় করছে। 

আফগানিস্তানের সঙ্গে কাতারের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও কাবুলে দেশটির দূতাবাস বন্ধ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এই দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখে থাকে। 

২০ বছরের যুদ্ধ শেষে ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনারা আফগানিস্তান  ছাড়ার আগেই দেশ ত্যাগ করেন পশ্চিমাদের সহায়তাপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। একই সময়ে কাবুল দখল করে তালেবান। 

দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬-২০০১ সালের  মতো নারীদের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে তালেবান। প্রশাসনের সব পদ থেকে নারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। নারী শিক্ষা এক ধরনের নিষিদ্ধ করা হয়। নারীদের এনজিওতে কাজে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

তা ছাড়া ক্ষমতায় এলে নিজেদের বাইরে অন্যদেরও সরকারে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল তালেবান। কিন্তু তা এখনও করেনি। এ অবস্থায় দেশটিকে বিশ্বের কোনো দেশ এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। 

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলা হয়, আফগানিস্তানে তালেবান সরকার স্থিতিশীল হোক তা চায় কাতার। কারণ তা না হলে এশিয়ার এ অঞ্চলটি ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। 

এসব কিছু মাথায় রেখে ২০১৩ সালে নিজ দেশে তালেবানকে অফিস খোলার অনুমতি দেয় কাতার। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তিও অনুষ্ঠিত হয় কাতারে। 

এই চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগের ছাড়াপত্র বলে মনে করেন বিশ্লেষণকরা। কারণ এরপর থেকে গনি সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সম্পর্ক দুর্বল হতে থাকে। একের পর এক অঞ্চলে ফিরে আসতে শুরু করে তালেবান। 

সূত্র : রয়টার্স