প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩ ১১:৫০ এএম
আপডেট : ১৯ মে ২০২৩ ১২:১১ পিএম
ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা গ্রুপ ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন শুক্রবার (১৯ মে) বলেছেন, ‘ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রুশ বাহিনীর কব্জায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
ওয়াগনার বাখমুতের ওপর কয়েক মাস ধরে চালানো হামলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এতে সেখানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
এ নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপশহরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে উল্লেখ করে টেলিগ্রাম বার্তায় প্রিগোজিন লিখেছেন, ‘বাখমুত আগামীকাল বা পরশু রাশিয়ার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাখমুতের এখন পতন ঘটেনি। নগরীটিতে স্যামোলেট নামে একটি উপশহর রয়েছে। এটি একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ, যা বাখমুতের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটির কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে। বর্তমানে সেখানে সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ চলছে।’
ইউক্রেন মঙ্গলবার বলেছে, তাদের বাহিনী বাখমুতের উত্তর ও দক্ষিণ উপকণ্ঠের ২০ কিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে।
তবে তারা আরও বলেছে, রুশ বাহিনী এখনও শহর অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে দনবাস অঞ্চলের এ নগরীর যুদ্ধটি হচ্ছে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘতম।
ওয়াগনার নিয়মিতভাবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে।
এদিকে, শীর্ষ চীনা দূতকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কিয়েভ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবে না, যাতে ইউক্রেন তার ভূমি হারায়।
ইউরেশীয়বিষয়ক চীনের বিশেষ প্রতিনিধি এবং রাশিয়ায় নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত লি হুইয়ের মধ্যে কিয়েভে এক বৈঠকের সময় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা এই মন্তব্য করেন। খবরটি নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে বলেছে, লি'র সঙ্গে ‘রুশ আগ্রাসন বন্ধ করার উপায়’ নিয়ে আলোচনা করেছেন কুলেবা।
ওই বৈঠকে কুলেবা জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবে না, যা তার অঞ্চলগুলো হারানোর শঙ্কা বহন করে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয় কুলেবা বলেছেন, ‘ইউক্রেনে ন্যায় শান্তি পুনরুদ্ধার করা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মানের ওপর নির্ভর করে।’
বিরোধ নিরসনে বেইজিংয়ের নেতৃত্বে আলোচনার জন্য লি মঙ্গল ও বুধবার কিয়েভে ছিলেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লি ইউক্রেনকে বলেছেন যে, সংকট শেষ করার দ্রুত কোনো পথ নেই।
অপর এক বিবৃতিতে লি বলেছেন, ‘সংকট সমাধানের জন্য কোনো প্রতিষেধক নেই এবং সব পক্ষকে নিজ থেকেই পদক্ষেপ শুরু করতে হবে, পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে এবং যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের মানবিক পরিস্থিতি প্রশমনে সব সময়ই তার নিজস্ব উপায়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে চীন এবং ইউক্রেনকে তার সামর্থ্যের মধ্যে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে বেইজিং।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো আক্রমণ করার পর থেকে ইউক্রেন সফরকারী লি হলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের চীনা কূটনীতিক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার তিন সপ্তাহ পরে তিনি কিয়েভে পা রাখেন।
এদিকে, কিয়েভের ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া সংস্থা জানিয়েছে, জেলেনস্কি একই দিনে চীনে ইউক্রেনের নতুন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউক্রেনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেসকে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের মূল্যে সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি কার্যকর হবে না।’
অন্যদিকে বেইজিং বলেছে, লি’র এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
চীন সরকারের মতে, লি এখন মস্কো সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি পোল্যান্ড, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সঙ্গেও এই সংঘাতের সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।
শি মার্চ মাসে মস্কো সফর করেছিলেন এবং চীনকে একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অবস্থান নেওয়ার টার্গেট নিয়েছিলেন।
১৫ মাসব্যাপী যুদ্ধের নিন্দা করতে অস্বীকার করার জন্য সমালোচিত হয়েছে চীন। কারণ, চীন রাজনৈতিকভাবে মস্কোকে সমর্থন করেছে।
সূত্র : ব্যারন্স, আলজাজিরা