প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:০৮ পিএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২৪ পিএম
মূল্যস্ফীতির লাদাম টানতে গিয়ে দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই সময়ে সুদের হার বৃদ্ধি করায় আগামী বছর বিশ্বে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার নতুন এক প্রতিবেদনে তারা এ অভাস দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একই সময়ে সুদের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন অর্থনৈতিক অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটা মন্থর হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতি সামান্য ঝাঁকি খেলেও, তা বিশ্ব মন্দার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
স্নায়ুযুদ্ধকালীন ১৯৭০-এর দশকে মন্দার ধকল কাটিয়ে ওঠার পর এবারই প্রথম বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চাকা এতটা দ্রুত গতি হারিয়েছে, যা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বিগ্ন।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একসঙ্গে যে মাত্রায় সুদের হার বাড়িয়েছে, গত পাঁচ দশকে তা আর দেখা যায়নি। এই প্রবণতা আগামী বছর পর্যন্ত চলতে পারে।
বিনিয়োগকারীরাও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তারা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতিতে সুদের হার প্রায় ৪ শতাংশে উন্নীত করবে, যা ২০২১ সালের চেয়ে গড়ে ২ শতাংশ পয়েন্টের বেশি।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে, সরবরাহ ব্যাহত না হলে এবং শ্রম বাজারের চাপ কম না হলে সুদের হার ওই পরিমাণ বৃদ্ধিতে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা গড়ে মহামারি শুরুর আগের পাঁচ বছরের গড়ের প্রায় দ্বিগুণ।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ মন্দায় পড়ার কারণে তা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার উদ্বেগ হলো, এই প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এর দীর্ঘস্থায়ী ফল উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে।’
ডেভিড ম্যালপাস বলেন, মূল্যস্ফীতির নিম্ন হার, মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নীতিনির্ধারকদের ব্যয় কমানো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য অতিরিক্ত বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূলধন বরাদ্দের কৌশল নির্ধারণ করা উচিত, যা প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকি না বাড়িয়েই সেটা করা সম্ভব বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য বিভিন্ন নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, মন্দার ধাক্কা যাতে চড়াও না হয়, সেজন্য শ্রম-বাজারের সীমাবদ্ধতা কমাতে হবে, বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহে বৈশ্বিক সমন্বয় করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নেটওয়ার্কও শক্তিশালী করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতির চাকা আরও স্লথ হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল।
জুলাই মাসের প্রাক্কলনে আইএমএফ বলেছিল, ২০২২ সালে বিশ্বের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী মাসে নতুন প্রতিবেদনে সংশোধিত হার প্রকাশ করবে তারা। এ বিষয়ে আইএমএফের মুখপাত্র গেরি রাইস বলেছেন, কিছু দেশ আগামী বছর মন্দার কবলে পড়লেও সেটা বিশ্ব মন্দার রূপ পাবে কিনা, তা বলার সময় এখনও আসেনি। এ নিয়ে বিস্তর কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
প্রবা/ ইউরি