প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:১৭ পিএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:২৩ পিএম
ফাইল ছবি
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। এ সংস্থাকে পশ্চিমা বিশ্বের ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসসিওর বর্তমান সদস্য ৯টি দেশ। চীন, রাশিয়া ও ভারত ছাড়াও এর মধ্যে পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান রয়েছে। আগামী ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তানের সমরখন্দে এ সদস্য দেশগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে চীন ও পশ্চিমাদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এ পুরো সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। যিনি সম্মেলনের পরে রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসসিওতে ভারত অনন্য অবস্থানে আছে। রুশ বাহিনী ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিমা দেশসহ কোয়াড জোটের সদস্য দেশগুলো এর নিন্দা জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা থেকে বিরত থাকে নয়াদিল্লি।
এদিকে ভারত আবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট কোয়াডেরও সদস্য। এর অন্য দুটি সদস্য রাষ্ট্র হলো জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।
সম্মেলনের পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মোদি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
২০২০ সালে বিরোধপূর্ণ কাশ্মির অঞ্চলের লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা এবং চীনের চার জন সেনা নিহত হয়।
ওই সংঘাতের পর এই প্রথম জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মোদি। তাই এ দুই প্রতিপক্ষের আলোচনার দিকে আলাদা নজর রয়েছে সবার।
অন্যদিকে সম্মেলনে যোগ দেবেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও। তার সঙ্গেও মোদির বৈঠক হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। পারমাণবিক শক্তিধর বৈরী দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা সম্মেলনেও পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এসসিওর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে যায় ভারত। এ সময় ভারতীয় কিছু রাজ্যকেও অন্তর্ভুক্ত করে পাকিস্তান তার ভূখণ্ডের একটি ‘কাল্পনিক’ মানচিত্র ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ আনে নয়াদিল্লি। আবার ২০১৯ সালে পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করা কাশ্মির দখলে নেয় ভারত--যা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।
তবে অনেকের বিশ্বাস, পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে এ সম্মেলনেই বদলে যেতে পারে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক।
এপ্রিলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ সম্মেলনে ইসলামাবাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির আলোচনায় তাদের সম্পর্কে আসতে পারে নতুন মোড়। এতে অন্য বিষয়ের পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে। উল্লেখ্য, নয়াদিল্লি বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে আসছে ইসলামাবাদ।
চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার চারটি রাষ্ট্র--কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান ২০০১ সালে এ অঞ্চলে চরমপন্থা দমন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়াতে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) গঠন করে।
২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান এতে যোগ দেয়। একই সময় এর পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভ করে ইরান।
ন্যাটোর মতো পশ্চিমা জোটের প্রভাব সীমিত করার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হয় এসসিওকে। তবে এর প্রভাব সীমিত হওয়ার কারণে আন্তঃআঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বৃহৎ ব্লক হিসেবে এটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশই এসসিও জোটের অংশ। বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশেরও বেশি আসে এ জোটভুক্ত দেশগুলো থেকে।
বছরের পর বছর এ জোটভুক্ত দেশগুলোর কার্যক্রম আঞ্চলিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাদের অর্থনীতি, বাণিজ্য এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পর্যন্ত প্রসারিত করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আরও কিছু দেশ এর সদস্য বা অংশীদার হিসেবে যোগ দিতে পারে। এতে করে বাড়তে পারে এ ব্লকের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। তবে ব্লকটিতে বরাবরের মতো চীন ও রাশিয়ার আধিপত্যই বেশি বলে জানান তারা।
মস্কো মধ্য এশিয়াকে তার প্রভাববলয় হিসেবে বিবেচনা করে। অন্যদিকে এসব অঞ্চলে ক্রমাগত অর্থনৈতিক পদক্ষেপ বাড়াচ্ছে বেইজিং। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলে যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে বেইজিং।
প্রবা/এনএস/এমআই