প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৯ পিএম
হাজার বছর ধরে টিকেছে ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। যুদ্ধবিগ্রহের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতির দুয়ারও পার হয়ে এসেছে। কিন্তু এবার এসে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আধুনিক ঝুঁকির সামনে দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রাচীন স্থাপনাগুলো।
একাধিক গণমাধ্যমের খবর বলছে, প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সম্পদ ধীরে ধীরে বালুর নিচে হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে যে দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ইরাক অন্যতম। গত বছর কয়েক ডজনবার ধুলাঝড় হতে দেখা গেছে দেশটিতে। সেসময় দৈনন্দিন জীবন স্থবির হয়ে পড়ার পাশাপাশি মানুষকে বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে।
ঝড় পার হয়ে যাওয়ার পর সবকিছুর ওপর কয়েক স্তরের পুরু আস্তর চোখে পড়ে। এমনকি সুমেরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উম আল-আকারিবের ধ্বংসাবশেষও এই চিত্র চোখে পড়ে।
কয়েক বছর ধরে কাজ করে নিদর্শনগুলোকে মাটির তলদেশ থেকে বাইরে আনার যে প্রচেষ্টা ছিল প্রত্নতাত্ত্বিকদের, তা রীতিমতো নষ্ট করে দিচ্ছে বালুঝড়। প্রত্নতাত্ত্বিক আকিল আল-মানস্রাওয়ি নিশ্চিত করেছেন এ খবর সম্পর্কে।
ইরাকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের সব সময়ই বালু খোঁড়ার কাজটি করতে হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে বালুর পুরুত্ব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- উম আল-আকারিব পাঁচ বর্গকিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত। গত কয়েক দশকের প্রতিকূল ঝড়ে এই সাইটের অনেকটা অংশই ফের চাপা পড়েছে বালুর নিচে।
অতীতে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল- প্রত্নতত্ত্ব চুরি হওয়া। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং জমির ওপর সেটির প্রভাব।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ইরাকে প্রায় সব প্রাচীন স্থাপনাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানস্রাওয়ি বলেন, আগামী ১০ বছরে পুরাকীর্তির স্থানগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বালুতে ভরাট হয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আধুনিক ইরাক বর্তমানে এমনিতে নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দশকের একনায়কতন্ত্র, যুদ্ধ, বিদ্রোহ, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দরিদ্রতা- সবই দেখেছে দেশটি। এর ওপরে আবার যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ইরাক ওই পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে যাদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাব পড়েছে।
গ্রীষ্মে এখন দেশটির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পার হয়ে যায়। খরার কারণে তাদের কৃষিকাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। এর জেরে কৃষকরাও বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছে শহরে।
উজানের পানির বাঁধ তুরস্ক এবং ইরাকের বড় নদীগুলোর প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও ইরাকের প্রাচীন সেচব্যবস্থা এবং পুরোনো কৃষি অনুশীলনের কারণেও পানির অপব্যয় হয় প্রচুর। সূত্র : ব্যারনস