প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৫ এএম
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৫২ এএম
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা উনিশ শতকে আদিবাসী ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নির্মূলে’ অংশ নিয়েছিলেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিল। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয় : আর্থিক লাভের জন্য ইনস্টিটিউটের (বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাকালীন বোর্ড অব রিজেন্টেস গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলে অংশ নিয়েছিল। এটা করার মধ্য দিয়ে তারা আদিবাসীদের ভূমি ও নানান ধরনের সম্পদ দখল করে। নিজেরা যাতে কোনো ধরনের ঝামেলায় না পড়ে এজন্য ইনস্টিটিউটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদিবাসীদের থেকে বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করেছে উল্লেখ করা হলেও তার পরিমাণ কত, তা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ওটা মূল প্রতিবেদনে আছে কি না তা-ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এটা বলা হয়েছে যে, আদিবাসীবিরোধী আইন পাস করতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা ইনস্টিটিউট ও সামাজিক অবস্থানকে ব্যবহার করেছিলেন। ওই আইন থেকে ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাতারাও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছিলেন।
এসব কিছু আমলে নিয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় : মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু আদিবাসীদের শোষণ করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার নীতি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সত্য বলা, ন্যায় প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ করতে হবে।
কারণ এত দিন পর্যন্ত মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আদিবাসীদের ওপর যে নিপীড়ন করা হয়েছে, তা স্বীকার করা হতো না। কোনো স্কুল বা কলেজে তা পড়ানো হতো না। এখন তা করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সত্য জানাতে হবে।
মিনেসোটা ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রবার্ট লারসেন বলেন, এ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় ইতিহাসের উপরিভাগে কিছুটা আঁচড় দেওয়া হয়েছে মাত্র। আরও গভীরে যেতে হবে। এসব সত্য স্কুল-কলেজে পড়াতে হবে।
এ প্রতিবেদনটি মিনেসোটা ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এবং মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে করেছে। ৫০০ পাতার এ প্রতিবেদনটি ট্রুথ প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্পের উপজাত ফল। এখানে ট্রুথ শব্দের পূর্ণরূপ হলো, টুওয়ার্ডস রিকগনিশন অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি-ট্রাইব্যাল হিলিং।
এ প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু করা হয়। ১৮৬২ সালের মরিল অ্যাক্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠা করার জন্য কীভাবে ভূমির বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতেই ট্রুথ প্রকল্প যাত্রা করে।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি আদিবাসীদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস একটি প্রস্তাব পাস করে, যেখানে আদিবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও খারাপ আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম নিজ রাজ্যের আদিবাসীদের ওপর পরিচালিত অন্যায় ও অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
সূত্র : রয়টার্স