প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩৬ এএম
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৫৭ এএম
গত ৩১ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেইজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: এপি
মাত্র ছয় মাস আগে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা। বৈঠক শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ এই রাজনীতিক বলেছিলেন, ‘চীনের আক্রমণাত্মক মনোভাবের বিপরীতে ভারত ও ফ্রান্সের চিন্তায় আশ্চর্য রকমের মিল রয়েছে।’
ক্যাথরিনের ভাষ্যমতে, ‘আমরা জানি চীন কী ভূমিকা পালন করছে। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, বেইজিং যেন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করতে না পারে।’
ভারত অবশ্য পরে কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গেই লক্ষ্য করেছে যে, ফ্রান্সের চীনবিষয়ক নীতিতে বদল এসেছে। শুধু ফ্রান্সই নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও (ইইউ) অনেক দেশ গত এক মাসে যেন কিছুটা চীনমুখী হয়েছে। দৃশ্যত পশ্চিমাদের সফরের ঢল নেমেছে বেইজিংয়ে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন সম্প্রতি বেইজিং সফর করেছেন। ইউরোপের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের পথ তৈরি প্রসঙ্গে ব্রাসেলসে তিনি এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ইউরোপের জন্য ক্ষতিকর। বরং চীনের সঙ্গে সম্পর্কে যা যা ঝুঁকি বা বিপদের দিক রয়েছে, সেগুলো কমিয়ে আনতে হবে।’
গত শুক্রবারই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ইউক্রেন যুদ্ধ কীভাবে থামানো যায়, সে নিয়ে কথা বলেছেন দুই নেতা।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও গত নভেম্বরে চীন গিয়েছিলেন। ডিসেম্বরে ইউরোপীয় কাউন্সিলের কর্মকর্তা শার্ল মিশেল যান বেইজিংয়ে।
এখানেই শেষ নয়, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও গত সপ্তাহে বেইজিং সফর করেছেন। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইউরোপীয় নেতাদের দফায় দফায় চীন সফরের পেছনে একাধিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রথম উদ্দেশ্য হতে পারে, রাশিয়াকে ক্রমাগত সামরিক সাহায্য জোগানো থেকে বেইজিংকে বিরত রাখা। কারণ ইউরোপের ধারণা, চীন যদি তার যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে প্রকাশ্যে রাশিয়ার পাশে দাঁড়ায়, তাহলে খুব বড় মাপের সংঘাত ও সংকট এড়ানো যাবে না।
দ্বিতীয়ত, যেভাবে মস্কো বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, তা ইউরোপের কৌশলগত স্বার্থের জন্যও সহায়ক নয়। বরং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালে রাশিয়ার সঙ্গে প্রয়োজনীয় দর কষাকষি করতে পারবে ইউরোপ।
তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক এবং বাণিজ্য যুদ্ধের শরিক ইউরোপ যে হতে চায় না, সেই বার্তাও জিনপিংকে দিতে চাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য হলো, এটা ভুললে চলবে না যে, ইইউ ও চীনের মধ্যে ৯০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ও পরিষেবা চুক্তি রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি দক্ষিণ ব্লকের জন্য চিন্তার। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটের সদস্য না হলেও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে ফ্রান্সের স্বার্থ রয়েছে।
এ অঞ্চলে ফরাসি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলো বাণিজ্যিক নৌপরিবহনের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকা। চীন সফরে মাখোঁর সঙ্গে যে ফরাসি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারাও গিয়েছেন সেটিও নজর এড়ায়নি ভারতের। আর বেইজিং ও প্যারিসের মধ্যে যে কোনো চুক্তি ভারতের স্বার্থের জন্য অনুকূল না-ও হতে পারে।
ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। একইসঙ্গে কৌশলগত ক্ষেত্রে দিল্লির জন্য চীন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে ফ্রান্স তথা ইউরোপের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে স্বভাবতই এটি ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস